
টাইমস ২৪ ডটনেট: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া ওয়েলসের পাহাড়ি অঞ্চল। এ পাহাড়ের ভেতর লুকিয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য প্রযুক্তি, ডিনোরউইগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইউরোপে এটা পরিচিত- ‘ইলেকট্রিক মাউন্টেন’ বা বিদ্যুতের পাহাড় নামে। তবে এটি শুধু বিদ্যুৎ তৈরি করে না, বরং গোটা ব্রিটেনের আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্বও পালন করে।ডিনোরউইগ ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও দ্রুততম পাম্পড স্টোরেজ হাইড্রোইলেকট্রিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু এটি কোনো সাধারণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নয়। যখন গ্রিডে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে, তখন এই কেন্দ্র পানি টেনে তোলে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত জলাধারে। আবার যখন হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যায় কিংবা কোনো জরুরি মুহূর্তে— সেই পানি বিশাল এক টানেলের মধ্য দিয়ে নিচে ফেলা হয়। পানি নিচে নামার সময় প্রায় ৫০০ টন ওজনের ছয়টি টারবাইন ঘুরিয়ে একযোগে বিদ্যুৎ তৈরি করে। মাত্র ৭৫ সেকেন্ডে পুরো প্রক্রিয়াটি চালু হয়ে যায়। প্রতি সেকেন্ডে ৮৬ হাজার গ্যালন পানি টারবাইনে গিয়ে আঘাত করে। যা দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম উদাহরণ।২০১৯ সালের গ্রীষ্মে ব্রিটেনজুড়ে হঠাৎ বিশাল বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। সারা দেশে ট্রেন থেমে যায়, হাসপাতালগুলোও পড়ে যায় ব্যাকআপ জেনারেটরের নির্ভরতায়। সে সময়ই ডিনোরউইগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়ে ওঠে একমাত্র নির্ভরস্থল। মাত্র ৭৫ সেকেন্ডের মাথায় এক বিশাল ঝড়ের মতো বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় গ্রিডে। কয়েক ঘণ্টার দুর্যোগ রোধ হয় মিনিটের ব্যবধানে। বলা যায়, এ কেন্দ্র ছিল সেদিনের নীরব সুপারহিরো।এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এর আগে ১৯৬৩ সালে চালু হয়েছিল এফফেস্টিনিওগ নামের আরেকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এত বছর পরও বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ডিনোরউইগ ও এফফেস্টিনিওগে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে আগামী এক দশকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করছে মালিক সংস্থা। এতে করে তারা আগামী ২৫ বছর টেকসই ও দক্ষভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।পৃথিবীর জলবায়ু সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে নির্ভরযোগ্য, পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস খুঁজছে মানুষ। হাইড্রোপাওয়ার ঠিক সে পথ দেখাচ্ছে। যদিও এখন যুক্তরাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় হাইড্রোপাওয়ারের অবদান মাত্র ২ শতাংশ, তবে এ ২ শতাংশের সময়োপযোগী উপস্থিতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিড যখন ভারসাম্য হারাতে বসে, তখন এই প্রকল্পগুলো কোনো কার্বন নির্গমন ছাড়া এক মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনে।