স্বাস্থ্য

মায়ের হাতের রান্না

সুরঞ্জিত ধর, টাইমস ২৪ ডটনেট : একটা সময় ছিল যখন প্রত্যেকটা মুহূর্ততে বায়না ধরতাম। বায়না বলতে সেরকম কিছু নয় মায়ের হাতে তৈরি রান্না। এটা খাব না ওটা খাব না তুমি রান্না করা ভুলে গেছো। সবার মা কত সুন্দর রান্না করে কিন্তু তুমি ভালো রান্না করতে পারো না। এগুলো রাগ করে বলতাম কিন্তু অমৃতের থেকে বেশি প্রিয় ছিল মা যখন ভাত মেখে খাইয়ে দিত। একটা খালার জায়গায় দুটো থালা নষ্ট করতাম, ছোট ছোট বাটি এঁটো করে রেখে দিতাম। তবুও মা কিছু বলতো না শুধু বলতো আমার খুব কষ্ট হয় সময় হলে একদিন বুঝবি। আমি বলতাম তোমার আবার এগুলো এত ধোয়ার কি মানে আছে। মা ঘর মুছতে থাকতো জুতো কিংবা সু পরে চলে যেতাম ঘরের ভিতরে তাড়াহুড়োর জন্য। বেশি কথা বললে বলতাম খবরের কাজে কাজ করি। আমার ব্যস্ততা সম্পর্কে তুমি কি বুঝবে। মা সব মুখ বুজে সহ্য করে নিত। সেদিনও বুঝতে পারিনি মায়ের ভালোবাসা। দুপুরবেলা বাড়িতে বেশি একটা আসতাম না, খাবারের জন্য। রাতের বেলায় মজা করে খেতে বসতাম। মা সাজিয়ে দিত ভাতের থালা থাকতো তিন থেকে চার রকমের ব্যঞ্জন। আমার প্রিয় মাছগুলো থাকতো। আমি রুটি খেতে খুব ভালবাসতাম। মায়ের শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও দুপুরবেলা রান্নার শেষে আমার জন্য গোটা ছয় থেকে আটটা রুটি করে রাখতো। তবুও আমার মন ভরতো না অনেক সময় রাগের চোটে বলেই দিতাম। যে সমস্ত সবজি রান্না করেছে খাওয়া যায় না। কারণ ছিল একটাই। কোনদিন হয়তো কোন একটা কিছুতে লবণ বেশি হয়েছে বা ঝাল বেশি হয়েছে সেটা নিয়ে বারংবার মাকে কথা শোনাতাম। আজকে হাজারো রেস্টুরেন্টে খেয়ে বেড়াই পাইনা মায়ের হাতের সেই অমৃতের স্বাদ। এখন বাড়িতে আমি আর বাবা । রান্না করি ঠিকই কত দুই একের বেশি ব্যঞ্জন বা রকমারি সবজি হয় না। সেটা সেদ্ধ হলো নাকি ঝাল বেশি হল লবণ কম হলো তবুও খেয়ে নিই। কিন্তু মনে পড়ে সেই মায়ের কথাগুলো। আমি আজকে মাকে হারিয়েছি প্রত্যেকটা মুহূর্ত মাকে মিস করি। এখন মনে হয় মা যদি লবণ দিয়েও ভাত দিত সেটা অমৃতের সমান ছিল। আর সেটা যদি নিজে হাতে মা ভাত মেখে খাইয়ে দিত সেটা অমরত্বের সমান ছিল। খুব মিস করি মা তোমাকে। যতই রেস্টুরেন্টে খাই না কেন এখনো খুঁজে বেড়াই তোমার সেই আলু সিদ্ধ দিয়ে মাখা ভাত এর অমৃতের স্বাদ। সেটা পাঁচ তারা রেস্টুরেন্ট ও দিতে পারবে না।

Related Articles

Back to top button