বাংলাদেশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুইটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

টাইমস ২৪ ডটনেট : ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে আপনাদের ব্যস্ততার মাঝেও অদ্যকার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় প্রকাশের লক্ষ্যে আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, অংশীজনের সাথে আলোচনা ব্যতিরেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুইটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে অধ্যাদেশ জারী করার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সকল শুদ্ধ ও বন্দরে কার্যক্রম যথাযথভাবে চলমান না থাকায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

সার্বিক বিষয়ে আমদানিকারক-রপ্তানিকারকগণ সহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারগণ অপূরনীয় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারী না হওয়ায় বন্দরে জায়গা স্বল্পতার কারণে পণ্যজটের সৃষ্টি, জরুরী সেবা বিস্মিত এবং জরুরী রপ্তানীমুখী শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ফলে সরকার যেমন হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তেমনি পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকার কারণে উত্তরোত্তর পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্ত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, যা দেশের সার্বিক উন্নতির অন্তরায়। এহেন অবস্থায় অংশীজনগণ সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করার আংশকা বোধ করছি। সিএন্ডএফ ফেডারেশন কর্তৃক এ বিষয়ে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পত্র মারফত অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ বিষয়ে ফলপ্রসূ কার্যক্রম গ্রহণ করেননি। অাপনারা জাতির বিবেক ও কলম সৈনিক। বর্তমানে বিরাজমান এহেন পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে জরুরী ভিত্তিতে সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা করে বাস্তব ভিত্তিক সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরী বলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশন মনে করে। আমাদের যৌক্তিক প্রস্তাবনা সমূহ বিচার বিশ্লেষন করে আপনাদের লেখনির মাধ্যমে প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় প্রচার করে আতির সংবে তুলে ধরে আমাদেরকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

সবিনয়ে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের সকল দেশে আমদানী পণ্যের শুল্কায়ণ ও খালাস কার্যক্রমে সিএন্ডএফ এজেন্ট এর ভূমিকা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন। বিভিন্ন দেশের কাস্টমস প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের সাথে লাইসেন্সধারী সিএন্ডএফ এজেন্ট বা কাস্টমস ব্রোকারগণ অবিচ্ছেদ্য ভাবে সম্পৃক্ত। কাস্টমস সংক্রান্ত আইন বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে শুল্ক কর পরিশোধ পূর্বক পণ্য খালাস কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সিএন্ডএফ এজেন্টগণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অপরিহার্য অনুসংগ। কাস্টমস আইন, ভ্যাট আইন, আয়কর আইন, প্রজ্ঞাপণ, এসআরও, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাস্টমস অর্গানাইজেশন WCO প্রণীত নীতিমালা প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্টদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

২। আমদানী পণ্যের সঠিক শ্রেনীবিন্যাস, শুল্কমূল্য নির্ধারণের নীতিমালা, আমদানী রপ্তানীতব্য পণ্যের আগমন, ল্যান্ডিং, জাহাজীকরণ, রপ্তানী পণ্যের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ইত্যাদি নানাবিধ কাজের বিভিন্ন বিধি-বিধান ও পদ্ধতিগত জটিলতা ও অস্পষ্টতা নিরসনে সিএন্ডএফ এজেন্টগণকে প্রতিনিয়ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দারস্থ হতে হয়। WTO, WCO প্রণীত নীতিমালা, প্রাসংগিক অন্যান্য নীতিমালার প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে সময়ে সময়ে প্রচলিত বিধিবিধানের সংস্কার করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাঠ পর্যায়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আমাদের প্রায়শঃই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা ও বৈঠক করার আবশ্যকতা দেখা দেয়। আইন ও বিধির দুর্বোধ্য ও টেকনিক্যাল বিষয় সমূহের উপর ব্যাখ্যা/স্পষ্টীকরণ প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ সমাধান করা হয়।

৩। আপনি আরো অবগত আছেন যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, যা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস (কাস্টমস এন্ড এক্সাইজ) ক্যাডারের সদস্যগণ তাদের মেধা, মনন এবং শ্রমের নিরন্তন প্রয়োগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের পাশাপাশি রাজস্ব নীতি তথা, কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর নীতি দক্ষতা ও সফলতার সাথে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে আসছে। সম্প্রতি সরকারের সংস্কার কর্মসূচির আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি বিভাগ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মর্মে আমরা জানতে পেরেছি।

৪। উক্ত প্রস্তাবনা ও প্রক্রিয়ার বিষয়টি আমাদের ফেডারেশনভুক্ত সকল এসোসিয়েশন গভীরভাবে পর্যালোচনা করে যে সকল উদ্বেগ ও আশংকা প্রকাশ করেছে তা যথাসময়ে যথাযথ কতৃপক্ষকে অবহিত করা আবশ্যক। প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপণা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে, রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগ না করা হলে আমদানী বাণিজ্য তথা রাজস্ব আহরণে দীর্ঘমেয়াদি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস এন্ড এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। রাজস্ব নীতি বিভাগ গঠনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিশেষায়িত বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও ব্যবসা- বান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য হতে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা না হলে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করার মূল উদ্দেশ্য অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রনালয়ের শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হন, আলোচ্য ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরন করা যেতে পারে।

২৫। এছাড়াও নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক পদসমূহে বর্তমানে দায়িত্ব পালনরত রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপণা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাগণকে রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় নীতি নির্ধারণী ও দায়িত্বশীল পর্যায়ে এই দুই ক্যাডার ভূক্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে মাঠ অভিজ্ঞতা ও নীতির মধ্যে মারাত্মক ব্যবধান রয়ে যাবে, যা রাজস্ব সংস্কারের মূল লক্ষ্যকে ব্যাহত করবে মর্মে আমরা বিশ্বাস করি। কর-রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত কর্মকর্তাগণ দীর্ঘমেয়াদে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আয়কর, কাস্টমস মূল্যায়ণ, পণ্য শ্রেনীবিন্যাস, আমদানি-রপ্তানি, প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করে দক্ষতা অর্জন করেন। এই দক্ষতা রাজস্ব ব্যবস্থাপণাসহ নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ ও নীতি প্রণয়নের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

৬। বিসিএস (কর) বিসিএস (কাস্টমস এন্ড এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ হতে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ (বিশ) বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা কে পালাক্রমে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান এর বিধান যুক্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসাবে আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ পদ ২টিতে কর-রাজস্ব আহরণের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নয়, এমন কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সৃষ্টি কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।

৭। সর্বোপরি বিশ্বায়নের এই যুগে বিশেষীকরণের (Specialization) গুরুত্ব বিবেচনায় কর-রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জ্ঞান অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিসিএস (কাস্টমস এন্ড এক্সাইজ) বিসিএস (কর) ক্যাডারের সদস্যগণের মধ্য হতে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের শীর্ষ পদসহ অন্যান্য সকল অনুবিভাগের নীতি-নির্ধারণী ও দায়িত্বশীল পদসমূহ পূরণের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বিভাগ দুটিকে কার্যকর, ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব, গতিশীল এবং অভ্যুথান-পরবর্তী বাংলাদেশের জনগনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে জনমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপদান

করা সময়ের দাবি বলে মর্মে অত্র ফেডারেশন মনে করে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জন আকাঙ্ক্ষা বিরোধী এবং সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থি কোনো উদ্যোগ কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির প্রতিবন্ধক হতে পারে। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ জারী স্থগিত রেখে সকল অংশীজনের বিজ্ঞ মতামত এবং ব্যাপকভিত্তিক পর্যালোচনা শেষে তা চূড়ান্ত-করণের অনুরোধ করছি।

৮। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার সাংগঠনিক কাঠামো পর্যালোচনা পূর্বক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান কাঠামোর আওতায় “রাজস্ব নীতি” ও “রাজস্ব ব্যবস্থাপনা” শিরোনামে দুইটি স্বতন্ত্র উইং প্রতিষ্ঠা করে প্রয়োজনীয় ও প্রত্যাশিত সংস্কার আনয়ন করাও সম্ভব মর্মে অত্র ফেডারেশন মনে করে।

সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে উক্ত বিষয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের কয়েকজন নেতৃবৃন্দকে আপনার সাথে মতবিনিময়ের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনার সুবিবেচনায় নির্ধারিত দিন ও সময়ে আমরা মতবিনিময়ের জন্য প্রস্তুত আছি।

Related Articles

Back to top button