বাংলাদেশ

দারুল মাকান হাউজিং কোম্পানির ভয়াবহ দুর্নীতি, প্রতারণা, অর্থআত্মসাৎ, চাঁদাবাজি ও প্রাণনাশের হুমকি অভিযোগ

টাইমস ২৪ ডটনেট :দীর্ঘ ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে ‘দারুল মাকান হাউজিং কোম্পানির” নামে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প-যেমন মাকান মডেল টাউন, বাড্ডা মডেল, মুন সিটি (১, ২), হাজারীবাগ মডেল টাউন ও মাকান রিভার ভিউ-এর আড়ালে এক ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্র দলবদ্ধ হয়ে, সাধারণ মানুষের আস্থার অপব্যবহার করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

শনিবার ১৭ মে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব), ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এইসব অভিযোগ করেন মাকান প্লট হোল্ডার সেন্ট্রাল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাগ।

শাহজাহান মাষ্টার (বর্তমানে কারাগারে) কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিগত সরকারের দোসর, তার ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, স্ত্রী, ভায়রা ও ভাই এবং কিছু অসাধু পরিচালক সংঘবদ্ধ হয়ে, বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে প্লট বিক্রি, রেজিস্ট্রেশন, উন্নয়ন ও বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিশ্রুত সুবিধা তো দূরের কথা-ভুক্তভোগীরা এখন জমিতে প্রবেশ করতে গেলেও বাধা ও প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্লট মালিকগণ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগুলি লিখিত ভাবে তুলে ধরেন।
দারুল মাকাম হাউজিং একই প্লট একাধিক বাক্তির কাছে বিক্রি করে বিবাদ ও বিরোধ তৈরী করা।
রেজিস্ট্রির পরেও জমি বুঝিয়ে না দেয়া বা জোরপূর্বক দখলে রাখা।
রেজিস্ট্রেশনের আগে জমির পুরো টাকা বুঝে নিয়েও, রেজিস্ট্রির সময় জমির দামের চাইতেও অধিক টাকা দাবি করা এবং না দিলে রেজিস্ট্রি না দিয়ে নানান তালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করা।
ছাড়পত্র বা অনুমোদনের নামে অতিরিক্ত অর্থ (৬-৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত) চাঁদা দাবি করা।
জমির দাগ নম্বর ও অবস্থানে অসামঞ্জস্য ও ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে অর্থ দাবি করা।
ভুয়া দলিল তৈরি করে অতিরিক্ত জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের সাথে প্রকৃত মালিকদের সাথে মারামারি ও মামলা মোকাদ্দমায় ফেলে হয়রানি করা।
রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলে শতশত কোটি টাকা নিয়ে কাজ না করে নিজেরা আত্মসাৎ করা।
ঘর নির্মাণ করতে গেলে বাধা প্রদান এবং প্রতিবাদকারীদের ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে অর্থ আদায় করা।
পরিকল্পিত রাস্তার জমিকে প্লট হিসেবে বিক্রি করে প্রতারণা করা।
অভিযোগকারী ও প্রতিবাদকারী ভুক্তভোগীদের হুমকি প্রদান ও মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে হয়রানি করা।
অনুষ্ঠানে প্লট মালিকগণ ভুক্তভোগীদের মানবিক দুর্দশা তুলে ধরে বলেন, এই আবাসন প্রকল্প গুলোতে বিনিয়োগ করে হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবনের সঞ্চয় হারিয়েছেন। কেউ কেউ জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে এই প্রকল্পে বাসস্থান গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা আর্থিকভাবে নিঃস্ব ও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। অনেকেই পরিবারসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন, এমনকি কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তের করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে জোরালো দাবিসমূহ
১. প্রতারক ও অর্থ আত্মসাৎকারী শাহজাহান মাস্টার ও তার পরিবারের সকল সদস্য ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা।
২. প্লট মালিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জমিতে বসবাস বা নির্মাণে সহায়তা প্রদান।
৩. যেসব ভুক্তভোগী অর্থ পরিশোধ করেছেন, কিন্তু রেজিস্ট্রি পাননি-তাদের নামে দ্রুত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা।
৪. যাদের রেজিস্ট্রি হয়েছে কিন্তু জমি বুঝে পাননি, তাদের প্রকৃত প্লট বুঝিয়ে দেওয়া।

৫. আত্মসাৎকৃত তহবিলের নিরপেক্ষ তদন্ত ও পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করে দায়ীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান।
৬. বাচ্চা মডেল টাউন ও অন্যান্য দারুল মাকান প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে মগারদিয়া বাজারে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা।
৭. সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রকল্পের সব দলিল, অনুমোদন ও মালিকানা যাচাই করে সঠিক আইনি ভিত্তিতে পুনর্গঠন।
৮. যেহেতু এই প্রতারক চক্র জমির মূল্য নির্ধাররের সময় প্রকল্পের চারদিকে সিকিউরিটিওয়াল উন্নত রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, স্কুল-কলেজ ও মসজিদ এবং বিদ্যুতের ও ওয়াসার জন্য জমি বরাদ্ধ দিয়ে বিদ্যুৎ সুয়ারেজ এর ব্যবস্থা করে দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন এবং জমির রেজিস্ট্রির সময় পুনরায় এসব সুবিধা প্রদানের কথা বলে জমির দামের চাইতেও অতিরিক্ত অর্থ গ্রহন করেছেন, কিন্তু আজ অবধি কোনো প্রকল্পে এসব সুবিধা নিশ্চিত করেনি তাই অনতিবিলম্বে শাহজাহান মাস্টার গংদের সম্পদ জব্দ করে সরকারী ভাবে প্রকল্প এলাকায় এসব সুবিধাদি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আমরা সরকারের প্রতি বিনীত ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি যে-এই প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সাধারণ মানুষের সঞ্চিত অর্থ ও আবাসনের স্বপ্ন যেন এই দুর্নীতিবাজদের কারণে চিরতরে ধ্বংস না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করুন। অবিলম্বে জালিয়াতদের বিচারের আওতায় এনে প্রতারক শাহজাহান মাস্টার ও তার পরিবারের উল্লেখিত সদস্যদের সহ সংশ্লিষ্ট পুরো প্রতারকচক্রকে জেলে আবদ্ধ করে ভুক্তভোগীদের ন্যায্য অধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা হোক।

Related Articles

Back to top button