
টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন মোঃ জাহিদ হোসেন (রাব্বি)। আওয়ামী লীগের আমলে নিজেকে পরিচয় দিতেন ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিতেন। তার আদি নিবাস জামালপুর জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুরে হওয়ায় নিজেকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মির্জা আজমের আত্মীয় পরিচয় দিতেন। তার সহপাঠীরা তাকে আজমের খুবই কাছের লোক হিসেবে চেনেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। নানা অপকর্মের তথ্য গোপন করে এই ব্যক্তি এখন জুনিয়ার সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত আছেন দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্বদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা রাব্বী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামেরও ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ভাটারা-বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনে জড়িত ছিলেন রাব্বি।
রাব্বীর অপকর্ম সম্পর্কে অবগত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন-৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের অপকর্ম আড়ালের অপচেষ্টা করছেন তিনি। রাজধানীর অভিজাত গুলশান, বারিধারা এলাকার বিভিন্ন নামি দামি ক্লাবে নিয়মিত তরুণী সরবরাহ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আলোচনায় আসা মডেল মেঘনা আলমের মধুচক্রেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- সাবেক মেয়র আতিক ও পলাতক মির্জা আজমের কাছের লোক হওয়ায় নানা অপকর্ম করেও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠছে। বলা হচ্ছে-তার খুঁটির জোর কোথায়। প্রসঙ্গত- রাব্বি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যে ফ্ল্যাট বসবাস করছেন, সেটি তার বিভিন্ন অপকর্ম থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা।
পুলিশের গুলশান বিভাগের নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাব্বী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করার কারণে সেখানকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী তরুণী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে প্রতারণা করেন। এরপর ওই তরুণীদের রাব্বীর আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তরুণীদের প্রথমে মদ্যপান, পরবর্তীতে ইয়াবা, গাঁজা, ক্রিস্টাল আইসসহ নতুন ধরণের মাদকে আসক্ত করানো হয়। পরবর্তীতে কেউ যদি এই পথ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, গোপনে তুলে রাখা তরুনীদের অন্তরঙ্গড় মুহুর্তের ছবি এবং মাদক সেবনের ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার অনেক অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জমা পড়েছে জাহিদ হোসেন রাব্বীর বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়-কিছু কিছু তরুণীদের দিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সরবরাহের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন ভদ্রবেশ ধারণ করে চলা রাব্বী। তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ জানিয়েছেন জাহিদ হোসেন রাব্বীর কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। মাঝে মাঝে সে ওই অস্ত্র দিয়ে তরুণীদের জিম্মি করে অসামাজিক কার্যকলাপে বাধ্য করে। কেউ তার কথা মতো না চললে, তার অন্তরঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখায় রাব্বী। অবৈধ ওই অস্ত্র দিয়েই জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে রাব্বী। সেসব হামলার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। এমনকি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মাটি প্রপাটির্স নামের সার্ভিস এপার্টমেন্টে একেকদিন একেজন তরুণীকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করে মোজমাস্তি করার বিষয়টিও ওপেন সিক্রেট।
জামালপুরে থাকা রাব্বির এক ফুপা জানান, রাব্বীর বাবা মৃত মোঃ শাহাদাৎ হোসেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল পৌরসভার একজন কর্মকর্তা (প্রকৌশলী) ছিলেন। তার দাদা মৃত আশরাফ আলী জামালপুর পৌরসভার করণিক ছিলেন। এর মধ্যে রাব্বীর বড় ভাই সাউদিত হোসেন দ্বীপ ঢাকায় আউটসোর্সিং করেন।