সারাদেশ

কেন ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প?

টাইমস ২৪ ডটনেট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার চীন ছাড়া বাকি সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক আগামী ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। অনেকটা আকস্মিকভাবে তিনি এমন এক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন; যা ২৪ ঘণ্টা আগেও প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় গত সপ্তাহে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই সিদ্ধান্ত বুধবার কার্যকর হওয়ার পর অনেকটা আকস্মিভাবে তা স্থগিতের ঘোষণা দেন তিনি। তবে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্বের ৭৫টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা দূর ও বাণিজ্য বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়।
এমনকি এসব দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কের পাল্টা শুল্ক আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন শুল্ক নিয়ে আগামী তিন মাস অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নতুন করে আরোপিত শুল্ক আগামী ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। তবে বেসলাইন হিসেবে যে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক জারি রয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে।
অন্যান্য সব দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ স্থগিত করলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে, দেশটির পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও বুধবার তা আরেক দফা বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, চীন বিশ্ব বাজার ব্যবস্থায় যে অসম্মান দেখিয়েছে তার ভিত্তিতে আমি চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক বাড়িয়ে দিচ্ছি; যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। আমি প্রত্যাশা করছি অদূর ভবিষ্যতে চীন বুঝতে পারবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলোকে ক্ষতবিক্ষত করার সময় আর টেকসই বা গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, চীন একটি চুক্তি করতে চায়। তবে এই চুক্তি নিয়ে কীভাবে কাজ করা যেতে পারে তা তারা জানে না। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একজন গর্বিত মানুষ। কীভাবে চুক্তি করতে হবে, তারা জানে না। কিন্তু তাদের এটির সমাধান করতে হবে।গত কয়েক দিন ধরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও বাণিজ্যিক কর্মকর্তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। তারা বড় ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করে ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানান।
রিপাবলিকান নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে বাজার ব্যবস্থায় ভয়াবহ ধস এবং বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিতে পারে। ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তে অনড় থেকে রিপাবলিকান নেতা ও ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেন, ‘‘আমার নীতি কখনই পরিবর্তন হবে না।’’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার শুল্ক কার্যকর হওয়ায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না বলে অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু বন্ড মার্কেটের ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের মাঝে ক্রমবর্ধমান শঙ্কা দেখা দেয়। এই একমাত্র কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকটা আকস্মিভাবে পারস্পরিক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ট্রাম্পের কাছে বন্ড মার্কেটের বিষয়ে উদ্বেগ উত্থাপন করেন। অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা তাকে মার্কিন ট্রেজারি মার্কেটে তরিৎগতির বিক্রয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে অবহিত করেন।শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বন্ড মার্কেটের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। আমি এটা দেখছিলাম। এখন বন্ডের বাজার সুন্দর রয়েছে। তবে হ্যাঁ, আমি গত রাতে দেখেছি, লোকজন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। আইনজীবীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল না। এটি কেবল লেখা হয়েছিল। আমরা এটি (শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত) হৃদয় থেকে লিখেছি, তাই না? এটি হৃদয় থেকে লেখা হয়েছিল এবং আমি মনে করি এটি খুব ভালো হয়েছে। তবে এটি হৃদয় থেকে লেখা হয়েছিল।

সূত্র: সিএনএন।

Related Articles

Back to top button