
টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও সরকারি চাকরি করছেন ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমান। তিনি বর্তমানে দিনাজপুরে আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) হিসাবে কর্মরত আছেন। এরই মধ্যে তিনি চট্টগ্রাম হাসপাতালে বদলি হয়ে যাওয়ার তদবীর করছেন। অথচ ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে কারাদন্ডে দণ্ডিত হওয়ার পরে তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন নির্দেশ দেন। তারপরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসাবে থাকাকালীন ডা . মুদ্দাচ্ছির রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফাতেমা তালুকদার। এই বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক বরাবর গত ৭ এপ্রিল’ ২০২২ ইং তারিখে একটি অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী স্ত্রী ফাতেমা তালুকদার। অভিযোগে দ্বিতীয় স্ত্রী উল্লেখ করেন, যে তার স্বামী ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমান প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন করে তাকে দ্বিতীয় বিবাহ করে। তাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। ধর্মীয় বিধি মোতাবেক এবং উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমানের সাথে ফাতেমা তালুকদারে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পরে তার স্বামীর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। পরবর্তীতে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে আগে তার একটি বিয়ে হয়েছিলো এবং সেই পরিবারে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিষয়টি জানার পর থেকে তাকে আরো বেশি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে এবং তিনি তার কোন ভরণ পোষন না দিয়ে তার কাছে টাকা চাইতে থাকে। টাকা না দিতে পারায় তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এর তাকে বিভিন্ন সময় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেন। এরপর থেকে ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমান তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় । কিছুদিন পরে সে আমার তার কাছে আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। ফাতেমা তালুকদার দাবিকৃত টাকা দিতে না চাইলে বিভিন্ন ভাবে আমাকে মানুষিক নির্যাতনসহ ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। এরপর গত ১৬ মে’২০২২ ইং তারিখে ফাতেমা তালুকদার বাদী হয়ে
বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নম্বর-৮ এ, নারী ও শিশু মামলা নম্বর-১৭৩/২২, ধারা ১১ অনুযায়ী মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণ-এর ভিত্তিতে ১৭ আগস্ট-২০২২ নিম্নে সংযুক্ত রায়। ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাস বিনাশ্রমে কারাদণ্ড প্রদান করেন। যাহা পরবর্তীতে উচ্চ আদালত-এ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমান, কোড নম্বর-১৩৪৬৮৯, পোস্ট আইডি নম্বর-৩২৫৭৮, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৬০৫৪৯, বিসিএস ৩৩ ব্যাচ, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও ঢাকা মেডিকেল কলে হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে দিনাজপুরে আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) হিসাবে কর্মরত আছেন। সেখান থেকেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়ে যাওয়ার তদবীর করছেন বলে জানা গেছে। অথচ বাংলাদেশ সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ (৫৭ নং আইন) অনুযায়ী কোন সরকারী কর্মচারী ফৌজদারী মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা ১ বছরের অধিক মেয়াদের কারাদণ্ড এ দণ্ডিত হলে উক্ত রায়ের আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেয়া আছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নিদের্শ দেয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ’২০২৫ ইং তারিখে ডা. মুদ্দাচ্ছির রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ব্যবস্থা গ্রহনের নিদের্শ দিয়েছেন।