topরাজনীতি

২০ এপ্রিলের মধ্যে শান্তিচুক্তির আশা যুক্তরাষ্ট্রের, রাশিয়ার মনোভাব কী?

টাইমস ২৪ ডটনেট: যুক্তরাষ্ট্র এখনো আশা করছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ব্যাপক যুদ্ধের মধ্যেও আলোচিত যুদ্ধবিরতি আসন্ন সপ্তাহগুলোর মধ্যেই চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। তবে উভয় পক্ষই এখনো আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং আসন্ন আলোচনার আগে ক্রেমলিন যে শান্তিচুক্তির ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়, তারও ইঙ্গিত মিলছে। রোববার এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য জানিয়েছে আল-আরাবিয়্যা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে মস্কো-কিয়েভ যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাজ করছে হোয়াইট হাউস। যে দিনটি আবার চলতি বছরে পশ্চিমা ও অর্থডক্স চার্চ উভয়ের ইস্টার উদযাপনের দিন। তবে, যেহেতু দুই পক্ষের অবস্থানের মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে। তাই সময়সীমা পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধ সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও অগ্রগতি এখনো সীমিত। মার্কিন কর্মকর্তারা আগামী দিনে সৌদি আরবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন। যা রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রথম সপ্তাহগুলোর পর প্রথমবারের ঘটনা হবে।
এ নিয়ে ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা খুব শীঘ্রই পূর্ণ যুদ্ধবিরতি পাবো’। তিনি দাবি করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে জ্বালানি স্থাপনায় হামলা সীমিত করার বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে।
এদিকে রাশিয়া যে কোনো চুক্তির জন্য কঠোর শর্ত দিয়েছে। যার মধ্যে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার দাবি অন্তর্ভুক্ত। তবে কিয়েভ ও তার মিত্ররা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি মেনে হোয়াইট হাউস অস্থায়ীভাবে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করলেও এখনো কোনো স্থায়ী সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি।
এ অবস্থায় ইউরোপীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প কূটনৈতিক সাফল্যের লক্ষ্যে ইউক্রেনের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পারেন। তাদের মতে, পুতিন আলোচনায় দেরি করিয়ে ট্রাম্পের কাছ থেকে আরও ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছেন।লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেদা বলেছেন, ‘রাশিয়া কেবল আলোচনার অভিনয় করছে। তারা শান্তি বা যুদ্ধবিরতির কথা বললেও বাস্তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে’।
এদিকে সৌদি আরবে তিন পক্ষের আলোচনায় ৩০ দিনের জন্য জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধের প্রযুক্তিগত দিকগুলো ও কৃষ্ণসাগরে নৌচলাচলের নিরাপত্তার বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ দ্রুত ও কার্যকর আলোচনায় আগ্রহী। তিনি সৌদির আলোচনায় তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাঠাচ্ছেন। যেখানে সীমিত যুদ্ধবিরতির আওতায় সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের চেষ্টা করা হবে।
অন্যদিকে এই আলোচনায় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের পাঠাচ্ছেন পুতিন। যারা আলোচনা ধীর করার লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্রেমলিন বলছে, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক তখনই হবে, যখন একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি হবে। তবে তা মধ্য এপ্রিলের মধ্যে সম্ভব নয়।
ওয়াশিংটনের জার্মান মার্শাল ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন বারজিনা বলেন, ‘রাশিয়া কোনো তাড়াহুড়ো করছে না। কারণ যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে, তাহলে চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখা কঠিন হবে’।
এদিকে, পুতিন উত্তর কোরিয়ায় একজন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন, যেখানে কিম জং উনকে যুদ্ধের আপডেট জানানো হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা গত আট সপ্তাহে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যতটা অগ্রগতি করেছি, কেউ ততটা আশা করেনি’। তার ভাষায়, ‘আমাদের লক্ষ্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি, যা স্থায়ী শান্তি আলোচনার সূচনা করবে’।
এদিকে ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তি করতে চাচ্ছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চয়তা থাকে। তবে ইউক্রেন তাদের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে ট্রাম্প প্রয়োজনে মস্কোর ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন কি না, সে বিষয়ে ইউরোপীয় নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে সম্ভাব্য শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের চেষ্টা করলেও, রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় তা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ নিয়ে বিশ্লেষক এমা অ্যাশফোর্ড মনে করেন, ‘রাশিয়া যত বেশি সুবিধা আদায় করতে পারে, ততই লাভবান হবে। কিন্তু তারা আলোচনাটি একেবারে বানচাল করতে চায় না। আমরা সম্ভবত ধাপে ধাপে ছোট ছোট চুক্তি হতে দেখবো, যা একটি বড় চুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’।

Related Articles

Back to top button