
মিয়ান আরেফি:২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ফ্যাসিবাদী সরকার অহংকারী হাসিনার বিরুদ্ধে সমাবেশ চলছিল। সে সময় ভয়াবহ সহিংসতা হয়। আমি এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ড. সারওয়ার্দীসহ অনেকেই বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাই। সেখানে মিডিয়ার সামনে একটি প্রেস ব্রিফিং করি। যা আগের পর্বগুলোতে (১ থেকে ৫) উল্লেখ করেছি।
কাশিমপুর কারাগারে থাকার সময় ফ্যাসিবাদী সরকার আমাকে মানসিক ও নৈতিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমার পরিবারকেও বারিধারা ডিওএইচএস-এ প্রথম তিন মাস গৃহবন্দি রাখে। জরুরি কেনাকাটা বা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতেও দেয়নি।
আমি ও ড. সারওয়ার্দী অনেক পরিশ্রম করেছি। অন্যান্য শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে মিলে কাজ করেছি। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আমরা একটি বড় সমাবেশের পরিকল্পনা করেছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। আমরা নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষা করতে চেয়েছি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) বীর বিক্রম ড. সারওয়ার্দী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন বিশ্বস্ত ও সৎ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের প্রাক্তন কমান্ড্যান্ট ছিলেন। সেনা প্রশিক্ষণ ও ম ডক-ট্রিন কমান্ডের (অজঞউঙঈ) জিওসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদী হাসিনা তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। এরপর তার সব সুযোগ-সুবিধা কেটে দেওয়া হয়।
তিনি কোনো সেনানিবাসে প্রবেশ করতে পারেন না। এমনকি চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (ঈগঐ) যেতেও পারেন না। এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।
ড. সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করা হয় নি। আমি মনে করি তার বিরুদ্ধে থাকা সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা উচিত।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী হাসিনার স্বৈরশাসনে বহু বিরোধী নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন।
বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতন হয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রাণঘাতী সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর তিনি দেশ ছেড়েছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশ শাসনের তার আধিপত্য শেষ হয়েছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনা সরাসরি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড তদারকি করেছেন। তিনি সহিংসতার জন্য দায়ী। তদন্তকারীরা বলছেন, হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ‘দৈনিক প্রতিবেদন’ পেতেন। প্রকাশিত এক নথিতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনী অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছিল।
২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে। সাবেক এক বিচারপতি এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করছেন।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে হাসিনার সরকার ২০০০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। অগণিত মানুষ আহত হয়েছে। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, দেশকে ঠিক করুন। সমস্ত সেক্টরের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করুন। তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। আমাদের অবশ্যই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। চিরতরে সমাধিস্থ করতে হবে।
যদি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের (সন্ত্রাসী) ও অনুসারীরা আবার রাজনীতি করবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও চিরতরে সমাপ্ত করতে চাই। এর আগেই যদি দেরি না হয়ে যায়।
লেখক: ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র