সুকুমার সরকার, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। যেখানে দুই দেশের জনগণই হবে প্রধান স্টেকহোল্ডার। একইসঙ্গে দুই দেশের ভৌগলিক নৈকট্যকে একে-অপরের নতুন সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে চায় ভারত।শনিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এছাড়াও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। এই ৭৬ বছর ভারতের জন্য একটি অসাধারণ যাত্রা ছিল। এই সময়ে ভারত একটি আধুনিক, সক্ষম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সমাধান দিতে ও মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভারতের এই রূপান্তর শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ছিল না বরং এটি ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের। ভারতের এই রূপান্তর আজকে সারাবিশ্বের জন্য নতুন সক্ষমতা এবং সম্ভাবনার সৃষ্টি করে চলেছে। তিনি বলেন, ভারতের এই যাত্রায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল। অভিন্ন ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধে যৌথ আত্মত্যাগ আমাদেরকে গভীরভাবে যুক্ত করেছে। আমাদের সম্পর্ক সব সময় জনকেন্দ্রিক ছিল। এক ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি হলো- দুই দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি একে-অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। দুই দেশ বে অব বেঙ্গলের শান্তি ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পারিক কল্যাণকর সম্পর্ক চায়। যেখানে আমাদের জনগণই হবে প্রধান স্টেকহোল্ডার। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের অংশীদারত্বে দুই দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে। আমরা ভৌগলিক নৈকট্যকে একে-অপরের নতুন সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করছি তখন বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সমর্থন আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা আশাবাদী যে, আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্পর্কের বাস্তবতা, পারস্পারিক কল্যাণ ও আন্তঃনির্ভরতার যুক্তি দুই দেশের সম্পর্কের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে যাবে।প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বহুমুখী। পারস্পারিক সম্মান ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের অভিন্ন শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ এবং আশা করে এই সম্পর্কে স্বচ্ছতা এবং সাম্যতা থাকবে। জনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায়, যেখানে দুই দেশের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হবে। পারস্পারিক স্বদিচ্ছা, আস্থা, সম্মানের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে।