মতামত

কর্মফল ভোগ করতেই হয়

রিয়াজুল হক:চাকরিরত অবস্থায় এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তার অধস্তনদের নানাভাবে হয়রানি করত, এসিআর খারাপ দিত, এমনকি খারাপ ব্যবহারও করত। উনার ঘরানার বাইরের কাউকে ভালো এসিআর দেওয়ার সময় বলতেন, ‘একে কেন ভালো রিপোর্ট দিতে হবে? ওর প্রমোশন হওয়া উচিত না।’

সমস্যা হচ্ছে, চাকরিতে থাকা অবস্থায় কেউ কেউ তার অন্যায় কাজগুলো বুঝতে পারে না। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে না, মুষ্টিমেয় কিছু চাটুকার। এসব চাটুকারদের কারণে সে মনে করে, যা সে করছে, সেটাই সঠিক। তার কোন ভুল নেই আর অন্যায় করা তো তার দ্বারা সম্ভবই হয় না।কিন্তু যখনই চাকরির সময় শেষ হয়, তখনই আস্তে আস্তে অতীতের কর্মের ফল তার সামনে হাজির হতে থাকে। তোষামোদকারীরাও তখন নিখোঁজ হয়ে যায়।

এই ধরণের মানুষ খুব বিদ্বেষ পরায়ণ হয়ে থাকে। এরা মানুষের ভালো দেখতে পারে না। অন্যের ভালো দেখলে এদের অন্তর জ্বলতে থাকে। এরা ভালোর মধ্যেও খারাপ তালাশ করে। এরা নিজের খুশিতে যতটা না খুশি হয়, অন্যের খারাপ দেখলে তার চেয়ে আরো বেশি খুশি হয়। এরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। শক্তি সামর্থ্য না থাকলে, অন্যের ক্ষতি হোক সেই আকাঙ্ক্ষা করে। যে কারণে এরা কখনো শান্তিতে থাকতে পারেনা।

যাই হোক, শুরুর সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ঘটনায় আসি। অনেকদিন হলো সেই কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। নানা প্রয়োজনে তাকে সেই পুরানো অফিসে যেতে হয়। তবে এখন আর কর্মকর্তারা তাকে গুরুত্ব দেন না। যারা তার হাত ধরে চাকরিতে জয়েন করেছিল, তাদেরই কেউ কেউ তো এখন তাকে হয়রানিও করে। কোনো প্রয়োজনে অফিসে গেলে তার এখন অনেক সময় লেগে যায়।

একদিন সময় বেশি লাগার কারণে বিরক্ত হয়ে তিনি বলে ফেললেন, ‘সৃষ্টিকর্তা সব দেখে। আমার সাথে যে যেমন করবে, সে তেমন ফল পাবে।’

সেই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলে ভুল বলেননি।উনি চাকরি জীবনে যেমন করেছেন, উনি এখন ঠিক তেমনই ফল পাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নিজের কর্মফলের ফলের বিষয়টি তিনি বুঝতে পারছেন না।

মূলত এটাই সবক্ষেত্রে ঘটে থাকে। আপনি আজকে যা করছেন, তার কর্মফল সামনে আপনাকে ভোগ করতেই হবে।

লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

Related Articles

Back to top button