খন্দকার হানিফ রাজা, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: দেশের মোট নন-ইউরিয়া সার আমদানিতে ৭০/৭৫ ভাগ দায়িত্ব বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ডেভলেপমেন্ট কর্পোরেশনের (বিএডিসি)। গত সময়ে ৩০/৪০ ভাগ ছিলো। দুই থেকে তিন বছর আগে দেশে কোন সার সংকট ছিলোনা। কিন্তু বর্তমানে বিএডিসির মাধ্যমে সার আমদানির দায়িত্ব বেশি নেয়ায় দেশে সার সংকট দেখা দিচ্ছে। অন্য দিকে বিএডিসি’র সার আত্মসাতের ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে কৃষক সঠিক সময়ে সার পাচ্ছেনা ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে গিয়ে উচ্চ মূল্যে আমদানি করা সার পরিবহন ঠিকাদার আত্মসাত করার ঘটনা বেড়েই চলছে। বিগত বছরগুলোতে বিএডিসির ৩ থেকে সাড়ে ৫ লক্ষ মে. টন সার পরিবহন ঠিকাদারদের মাধ্যমে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে রবি মৌসূমে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই আগামি জানুয়ারিতে শুরু হতে যাচ্ছে বোরো মৌসূম, সেখানেও সার সংকটের আশংকা রয়েছে।
সিন্ডিকেট সক্রিয় রাখতে বর্তমান কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের মদদপুষ্ট সদ্য যোগদানকৃত বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খান। দেশের এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খান ও যুগ্নসচিব পদমর্দার বিএডিসির সদস্য পরিচালক সার ব্যবস্থাপন মো. আশরাফুজ্জামান স্বপরিবারে বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত। এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে বিভিন্ন সময়ে বিএডিসির সিন্ডিকেটের সার কেলেংকারি তথ্য। তখনকার সিন্ডিকেট সদস্যরা হলেন বিএডিসির সাবেক কর্মকর্তা। একজন সাবেক পরিচালক সদস্য আব্দুস সামাদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, সদ্যবিদায়ি ড. নুরুননাহার চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ। যারা অদক্ষ আর ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন। লট অনুযায়ী সার বুঝে নেয়ার নিয়মও তুলে দেয় তারা। এদের মদদপুষ্ট প্রতিষ্ঠান বংঙ্গট্রেডার্স, প্যাসিফিক কনজ্যুমার গুডস ও স্বদেশ শিপিং।
এছাড়াও বিএডিসি’র ১২৫টি গুদামের মধ্যে ৭০ শতাংশ গুদামেই সার নেই। বিএডিসি’র গুদামসমূহে সার না থাকায় চলমান রবি ও বোরো মৌসূমে বিএডিসিএর সার ডিলারদেরকে ডিসেম্বর ২০২৪ সালের বরাদ্দের সার সময়মত দিতে পারছে না ফলে মাঠ পর্যায়ে দেখা দিয়েছে চরম সার সংকট।
বিএডিসির বিভিন্ন সারের গুদাম সম্পর্কে জানা যায় কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, আটঘরিয়া, নাটোর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার, বরিশাল, বরগুনা এসকল গুদামের অধিকাংশ জায়গা ফাঁকা, সেখানে সার নেই। গুদামসমূহে শীপ ব্রোকার পরিবহন ঠিকাদাররা দৈনিক যে সার গুদামে সরবরাহ করছে সেখান থেকে কিছু কিছু ডিলারকে সীমিত পরিমাণে সার সরবরাহ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে বলা হচ্ছে যে পরবর্তিতে সার আসলে সরবরাহ করা হবে।
বিএডিসির সার ডিলারদের মাঝে ডিসেম্বর মাসে সারের বরাদ্দ ছিলো ডিএপি সার ১৮৩২৫৬ মে. টন, টিএসপি সার ১৯৩৬৪৬ মে. ট ও এমওপি সার ১২৮৭৯৬ মে. টন। ডিসেম্বর মাসে বিএডিসি’র অধিকাংশ গুদামে সারের মজুদ ছিলো খুবই সামান্য।
তার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলাতে ডিসেম্বর মাসে ডিএপি সার ৬৪৫৪ মে. টন ও টি এসপি সার ৩২৬৬ মে. টন সারের বরাদ্দের বিপরীতে মজুদ ছিল মাত্র ৩২৬৬ সে, টন সারের বরাদ্দের বিপরীতে মজুদ ছিলো মাত্র ডিএপিসার ৮৩৫ মে. টন ও টিএসপি সার ৯১৬ মে. টন। উল্লেখ্য, যে নভেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত টিএসপি সার ডিলারদের সরবরাহ করতে পারেনি।
নেত্রকোনা জেলাতে ডিসেম্বর মাসে ৬৯৭১ মে. টন ডিএপি সার বরাদ্দের বিপরীতে ডিএপি সারের মজুদ আছে মাত্র ২২০০ মে. টন এবং ২৪০০ মে. টন টিএসপি সার বরাদ্দের বিপরীতে টিএসপি সারের কোন মজুদ ছিলো না। তার মধ্যে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলাতে ডিসেম্বর মাসে সারের বরাদ্দ ছিল ১৮৪৩৫ মে. টন কিন্তু অত্র অঞ্চলের গুদামসমূহে ডিলারদের সরবরাহের জন্য কোন ডিএপি সারের মজুদ নেই।
এছাড়াও রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাপাই নবাবগঞ্জ জেলাগুলোতে ডিসেম্বর মাসে ডিএপি সারের বরাদ্দ ছিল ১৯৯৭৯ মে. টন কিন্তু অত্র অঞ্চলের গুদামসমূহে ডিলারদের সরবরাহের জন্য ডিএপিসারের মজুদ আছে মাত্র ৬৫০০ মে. টন।
সারাদেশে সারের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটের, একারনেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহ কঠিন থেকে কঠিন হয়ে পরেছে। সদ্যবিদায়ী সরকারের আমলের রেখে যাওয়া প্রেত আত্মারা বর্তমান সরকারের সাফল্যকে ভুলন্ঠিত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণদিততভাবে দেশকে সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানা যায়।