এস.এম.নাহিদ :রাজধানীর খিলক্ষেতে রেলওয়ের জলাধারের জায়গা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নামধারী কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। কেউ পাঁচতারকা হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স নাম ব্যবহার করে দখলবাজি করছে , কেউ শিশু পার্কের নামে দখলবাজিতে সক্রিয় রয়েছে, আবার কেউ কেউ ইডেন পার্ক করার পাঁয়তারা করছে।এমনকি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করে খেলার মাঠ তৈরি করতে যাচ্ছে একটি কুচক্রী মহল। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে মাঠ অথবা পার্কের দাবি নিয়ে খিলক্ষেত এলাকার কারো কোন ধরনের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড না থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে নানা কৌশলে বাংলাদেশ রেলওয়ের জলাধারের মূল্যবান এই সম্পত্তিতে বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করে দখলে নেবার পায়তারা করছে ।
সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে রাজধানীর কুড়িলে রেলের ‘জলাধার ভরাট করে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ শুরু করেছিল মিলেনিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেড। এতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় প্রতিবাদে নামেন স্থানীয়রা। উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। ফলে দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে কাজ। স্থিতাবস্থা জারি থাকলেও গত নভেম্বর থেকে জায়গাটিতে আবারও ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। হোটেলের সাইনবোর্ড উঠে এবার বসেছে নতুন সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা ‘খিলক্ষেত ইডেন পার্ক, বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধানে ‘খিলক্ষেত ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়,এটি নিবন্ধিত কোন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নয়।এমনকি এলাকায় কোন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও যুক্ত নেই এই সোসাইটি। তবে নাম সর্বস্ব একটি কমিটি আছে যা কিনা এলাকার বিএনপিপন্থী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত বলে জানান খিলক্ষেতের স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের জলাধারের এই মূল্যবান সম্পত্তি কতিপয় চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা গ্রাস করার জন্যই কথিত মানববন্ধন, খেলার মাঠ, শিশু পার্ক, ফাইভ স্টার হোটেল কিংবা শপিং কমপ্লেক্সের নাম ব্যবহার করে আসছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন পর গত মাসের ২৩ তারিখ থেকে ফের জায়গাটি ভরাট শুরু হয়। কিছুদিন আগে এক গ্রুপ এসে সেখানে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড (আংশিক) ছাত্রদলের ব্যানার লাগিয়ে যায়। পরে আরেক গ্রুপ এসে ব্যানার খুলে পার্কের সাইনবোর্ড বসিয়ে দেয়। বিলুপ্ত ওই জলাধারের ইতোমধ্যে ১.৮৪ একর জায়গার পুরোটাই ভরাট করা হয়ে গেছে। এখন চলছে সমান করার কাজ। আগামী বিজয় দিবসে জায়গাটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যানার লাগানো হয়েছে।
তবে এলাকাবাসী মনে করে – পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই এলাকায় জলাধার অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় (কমলাপুর) ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুস সোবাহান গণমাধ্যমকে বলেন, কারা পার্ক নির্মাণ করছে জানা নেই। কাউকে পার্ক নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ অনুমতির জন্য আবেদনও করেনি। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধ দখল নিজ নিজ উদ্যোগে সরাতে গত ৫ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।