নারগিস পারভীন, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা : চাকরি ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে নারী পাচারকারী চক্রের দুইজন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।১০ ই ডিসেম্বরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয় টি নিশ্চিত করছেন
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ০৯ ডিসেম্বর দুটি পৃথক অভিযানে ফ্যান গোউয়ে (২৭) ও ইয়াং জিকু (২৫) নামে দুইজন চীনা নাগরিকে গ্রেফতার করা হয়। চাঁদপুর জেলার সুবর্ণা আক্তার (২১) নামের এক ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নজরে আসে। তিনি সোমবারে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারকালে পালিয়ে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে চলে আসেন এবং জানান ফ্যান গোউয়ে (FAN GOUWEI) একজন চীনা নাগরিক তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছে যে বর্তমানে চীন যাবার উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টে অবস্থান করছে। অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিতা রানী সূত্রধর তার সহযোগী ফোর্সসহ বোর্ডিং লাউঞ্জ-৫ এ অভিযুক্ত চীনা নাগরিককে অভিযোগকারীর সহায়তায় সনাক্ত এবং আটক করে ইমিগ্রেশন থেকে অফলোড করণপূর্বক অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত দুজনকেই এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগী’র তথ্য অনুযায়ী নিকুঞ্জের একটি তিনতলা বাড়িতে আরো দেশী বিদেশী পাচারকারী নারী ভুক্তভোগী অবস্থান করছে বলে জানা যায় এবং প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সোমবার দিবাগত রাতে সিআইডি’র টিএইচবি সেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়ান্দা সংস্থা ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন এর একটি দল নিকুঞ্জের সেই বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ইয়াং জিকু (YANG XUEKUI) (২৫) নামে আরেকজন চীনা পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা সহ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এছারাও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সাথে যুক্ত আছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলে এবং চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।
সূত্র জানায়, গত অনুমানিক ০২ বছর পূর্বে টিপু এবং জিহাদ নামে দুই জনের সাথে ভুক্তভোগীর ফেইসবুকে বন্ধুত্ব হয়। তাদের সাথে মাঝে মধ্যে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কথা হতো। কথা বার্তার এক পর্যায়ে জিহাদ তাকে চাইনিজ কোম্পানীতে চাকরির প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি হলে টিপু এবং জিহাদ গত অক্টোবরের ২৬ তারিখ ভিক্টিমকে নিজ বাড়ি থেকে ঢাকার খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-১, রোড-৯/বি এর ৮ নং বাড়িতে নূরু নামক এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে আসে একই দিনে নূরু নামক ঐ ব্যক্তি ইয়াং হও (YANG HAO) সাথে ভিক্টিমের বিবাহের নাটক সাজিয়ে ভুয়া বিবাহ সম্পন্ন করে। ভূয়া বিবাহের পর তারা উল্লেখিত নিকুঞ্জের বাড়িতে বসবাস শুরু করে। এছারাও ঐ বাড়িতে আরো ৭-৮ জন চীনা ব্যক্তি সহ আরো নারীকে দেখেছেন বলে ভুক্তভোগী জানান। এর মধ্যে পাচারকারীচক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীকে নিকুঞ্জের বাসায় আটকে রেখে ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট সহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে। এই সময় কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। গত সপ্তাহে ভূক্তভোগীর কথিত স্বামী ‘ইয়াং হও’ চীনে চলে যায়। পরবর্তীতে পাচারকারীচক্রের সদস্য ফ্যান গুয়াই MU-2036 ফ্লাইটে পাচার করার জন্য গত ০৯/১২/২০২৪ খ্রি. ভুক্তভোগীকে জোর পূর্বক বাসা থেকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। বিমানবন্দরে এনে ভূক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সেটিংস এর ভাষা চাইনিজ ভাষায় রুপান্তর করে ফেরত দেয়। বিমানবন্দরে সুযোগ বুঝে পালিয়ে উক্ত ভুক্তভোগী নারী এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে সাহায্য চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তড়িৎ ব্যবস্থা নেন। আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে ইতিমধ্যে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার এডিশনাল ডিআইজি শিহাব কায়সার খান ( বিপিএম, পিপিএম) বলেন, বেশ কিছু দেশের মানবপাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত আছে। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রভোলন দেখিয়ে পাচার করার চেষ্টা করে। তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি। আমার মতে মানবপাচার পুরোপুরি ঠেকাতে সবার সতর্ক থাকার বিকল্প আর কিছু নেই। সবাইকে সতর্ক থাকার উদার্থ আহ্বান জানায়।