টাইমস ২৪ ডটনেট: চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আমেরিকায় বৈঠকে মিলিত হওয়া বৈশ্বিক নেতারা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার এক জটিল প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন।ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার চীনের সঙ্গে নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ধীরস্থির ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেবেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সংঘাতে রূপ নেবে না। অবশ্য ক্ষমতা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হস্তান্তর হলে পরিস্থিতি কী হবে বোঝা যাচ্ছে না। কারণ ট্রাম্প চীনের ওপর চড়া শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন, যা আবারও বাণিজ্য যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।বাইডেনের কাছ থেকে ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে নেতারা চীনের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক স্থাপনের উপায় খুঁজছেন। শি জিনপিং পেরুতে এক বৈঠকে বাইডেনকে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্থিতিশীল ও টেকসই সম্পর্ক বজায় রাখতে চান।তবে চীনের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্কের এই প্রচেষ্টা জি ২০ সম্মেলনের সময় বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ চীনের প্রশ্নে মানবাধিকার, তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা, সাইবার হামলা, রাশিয়াকে সহায়তা ও শুল্ক নিয়ে সম্ভাব্য সংঘর্ষের মতো ইস্যুগুলো সামনে এসে পড়ে, যা সমস্যা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।জি ২০ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মঞ্চে অর্ধশতাব্দীর যাত্রা সমাপ্ত করবেন বাইডেন। ফলে অন্য নেতারা চীনের সঙ্গে নতুন একটি অধ্যায় শুরুর সুযোগ পেতে পারেন।বাইডেন জাতিসংঘে তার শেষ ভাষণে বলেছিলেন, বিশ্ব আরেকটি মোড় পরিবর্তনের সময়ে রয়েছে। আমরা আজ যে সিদ্ধান্ত নেব তা ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হবে বলে আশা করছেন বিশ্বনেতারা।
গবেষক জন ডেলুরি বলেছেন, ইউরোপীয় নেতারা শি’র দিক থেকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিতে চান। তারা চান, শুধু সংলাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সম্পর্ককে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে যেখানে চীনকে তারা নির্ভরযোগ্য মনে করতে পারবেন।জি ২০ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি তার দেশকে মুক্ত বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার সমর্থক হিসেবে তুলে ধরেন। শি ও তার উপদেষ্টারা আশা করছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অনিশ্চয়তার মধ্যেও বিদেশি নেতারা চীনের পাশে থাকবেন।জি ২০ তে দেওয়া ভাষণে শি বলেছেন, দেশগুলো একে অপরের উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নয়, সুযোগ হিসেবে দেখবে। পরস্পরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করবে।তবে নিজের বক্তব্যে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও চীনের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। স্টারমার তার বক্তব্যে চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী কর্মী জিমি লাইয়ের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সে সময় চীনা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাৎক্ষণিক ক্যামেরায় দৃশ্যধারণে বাধাগ্রস্ত করেন ও সাংবাদিকদের কক্ষ থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে।শি জিনপিংয়ের ক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ বছরখানেক বন্ধ ছিল। বেইজিংয়ের পাঠানো গুপ্তচর বেলুন যুক্তরাষ্ট্র গুলি করে ভূপাতিত করা থেকে ওই বিবাদের সূত্রপাত।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় চীনের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও তাদের প্রভাব নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন ও অস্ট্রেলিয়া উচ্চপর্যায়ের আলোচনা পুনরায় শুরু করেছে ও কিছু বিষয়ে কিছু উদ্বেগ প্রশমিত হয়েছে।অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিজেদের কূটনীতিতে কিছু নমনীয়তা আনতে পারে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক ওয়াং ওয়েন মনে করেন, ট্রাম্পের মেয়াদে চীন আরও কৌশলগত কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে। বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন নেতৃত্বে পরিবর্তনের এই সময়ে শি জিনপিং কূটনৈতিক সুযোগগুলিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।
তথ্যসূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।