টাইমস ২৪ ডটনেট: ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ-এর মধ্যে উগ্রবাদ ও চরমপন্থা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভবিষ্যতে ইসরাইলের বেসামরিক সরকারগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে এবং দেশটির স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। ইসরাইল একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হলেও এর গভীরে লুকিয়ে থাকা গোড়া ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
ইসরাইল তার প্রতিষ্ঠার সময় থেকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ চেহারা ধরে রাখলেও, দেশটির অধিকাংশ পদক্ষেপে ধর্মীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর উগ্রবাদী ও চরমপন্থি জাতীয়তাবাদী গ্রুপগুলো আল-আকসাসহ ‘পবিত্র ভূমি’ কুদস বা জেরুজালেম পুনর্দখলের নামে গাজা ও পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
তাদের এই চরমপন্থার মূল অনুপ্রেরণা আসে ইহুদি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মূল ব্যক্তিত্ব রাব্বি (ধর্মীয় যাজক) আব্রাহাম আইজ্যাক কুকের শিক্ষাগুলো থেকে। যিনি বিশ্বাস করতেন যে, এই ভূমি তাদের ঈশ্বরের দেওয়া অধিকার। তার এই শিক্ষাই মূলত ইহুদি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে সংহত হতে অনুপ্রাণিত করেছে।১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরসহ বেশ কিছু এলাকা দখলের পর এই ইহুদি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করতে শুরু করে এবং দ্রুত তাদের প্রভাব বাড়ায়।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে আইডিএফ-এ এ ধরনের ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের সংখ্যা ২-৪ শতাংশের মতো ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। আর এই উগ্রবাদী ও চরমপন্থি ইহুদি গোষ্ঠীগুলো দেশটির সেনাবাহিনীর বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন হয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর একের পর এক সামরিক অভিযান পরিচালনা করে আসছে এবং বেসামরিক মানুষদের ওপর তাদের সামরিক হুমকি বাড়াচ্ছে।আইডিএফ-এর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায় যে, তারা গাজা ও লেবাননে বোমা বর্ষণ করছে এবং বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। এমনকি এসব অঞ্চলের হাসপাতাল, স্কুল এবং ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা করার ঘটনাও ঘটছে।
তাদের এসব অভিযান ও আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো- গাজা ও পশ্চিম তীরকে ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। চরমপন্থি ইহুদি জাতীয়তাবাদী আদর্শ অনুসরণ করে এই গোষ্ঠীগুলো বিশ্বাস করে যে, তারা ঈশ্বরের দেওয়া পবিত্র ভূমি পুনর্দখল করছে এবং সেই লক্ষ্যে তাদের এহেন কর্মকাণ্ডকে তারা বৈধ বলেই মনে করে।আইডিএফ-এর এই ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উগ্রবাদী ও চরমপন্থি কর্মকাণ্ড ইসরাইলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। আইডিএফ-এর এই উগ্রবাদী ও চরমপন্থি রূপান্তর মূলত ইসরাইলি সমাজ এবং এর রাজনৈতিক কাঠামোতে একটি গভীর পরিবর্তনের ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি বর্তমান যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের পতন হয় এবং দেশটিতে কোনো উদারপন্থি সরকার প্রতিস্থাপিত হয়, তাহলে আইডিএফ এবং সেই সরকারের মধ্যে অনিবার্যভাবেই সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মধ্যে থাকা এসব ধর্মীয় উগ্রবাদী ও চরমপন্থিদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ভবিষ্যতে আইডিএফ ও সরকারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যা ইসরাইলের জন্য নতুন ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: যুগান্তর অনলাইন।