topআন্তর্জাতিক

কেন অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর তৃতীয় চার্লসকে নিয়ে উচ্চবাচ্য করেছিলেন?

টাইমস ২৪ ডটনেট: ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস যখন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে বক্তৃতা করছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার স্বাধীন ও স্থানীয় সিনেটর তার উদ্দেশে চিৎকার করে বলেছিলেন: অস্ট্রেলিয়া তোমার দেশ নয়।অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের আদিবাসী এমপি লিডিয়া থর্প দেশটির পার্লামেন্টে ব্রিটিশ রাজাকে দেখে তীব্র ক্ষোভে প্রকাশ করেন। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানোসহ তাদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ঔপনিবেশিক ইতিহাস স্মরণ করে তিনি ওই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন: এটা তোমার দেশ নয়।অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাষণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনেটর লিডিয়া থর্প দ্রুত গতিতে এবং প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ অবস্থায় ডায়াসের দিকে ছুটে যান এবং চিৎকার করে বলেন: “তুমি আমার রাজা নও।” তিনি আরো বলেন: “এটি তোমার দেশ নয়।” পার্সটুডে জানিয়েছে, ইংল্যান্ডের রাজা গত সোমবার তার স্ত্রী রানী ক্যামিলা, তার মা দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া সফরে গেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সংসদের সিনেটর এবং সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তার ভাষণের ভেতরেই নেটিভ সিনেটর লিডিয়া থর্প ক্রুদ্ধ হয়ে চিৎকার করে প্রতিক্রিয়া জানান।

সাধারণভাবে, অস্ট্রেলিয়ার ওপর ব্রিটিশ শাসনের বিরোধীদের দুটি দলে বিভক্ত করা যেতে পারে। একটি দলে পড়বে স্থানীয়রা যারা বিশ্বাস করে যে ব্রিটিশরা তাদের দেশ দখল করে স্থানীয়দের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, লুটপাট করেছে এবং গণহত্যা চালিয়েছে। এসব অপরাধ চালিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় শ্বেতাঙ্গদের শাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রতিবাদকারীদের দ্বিতীয় অংশটি অস্ট্রেলিয়ার ওপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ধারাবাহিকতা এবং ব্রিটিশ রাজত্বের সার্বভৌমত্বের ঘোর বিরোধী। তারা অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রজাতন্ত্রে পরিবর্তন করতে চায় এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান চায়।

অতএব, অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের নেটিভ এবং স্বাধীন সিনেটর নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক সংসদ থেকে বের করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত চার্লস তৃতীয়ের ওপর তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অস্ট্রেলিয়ান নেটিভদের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে ব্রিটিশদের অপরাধের কথা উল্লেখ করে চীৎকার করে বলেন:

তোমরা আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছো। আমাদের ভূমি আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও। আমাদের কাছ থেকে যা কিছু চুরি করেছো সেগুলো আমাদের ফিরিয়ে দাও।

এইসব শুধুমাত্র স্থানীয়দের স্লোগান নয় বরং স্বাধীনতাকামী এবং অস্ট্রেলিয়ার রিপাবলিকানদেরও বক্তব্য। তারা লন্ডন সরকারকে অস্ট্রেলিয়ার সম্পদ লুটপাট করার জন্য দায়ী করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ানদের মর্যাদা ও কর্তৃত্ব লুণ্ঠনের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিযুক্ত করে।

অস্ট্রেলিয়ান এই সিনেটর, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর পরিচালিত ব্রিটিশ গণহত্যার কথা উল্লেখ করে বলেন: আমাদের হাড়, মাথার খুলি, আমাদের শিশু এবং মানুষ ফিরিয়ে দাও।
ব্রিটিশ রাজার উপস্থিতিতে এ ধরনের বক্তব্য সবচেয়ে জোরালো প্রতিবাদ। লিডিয়া থর্প ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের তথাকথিত মানবতাবাদের প্রকৃত মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন।একজন বিশ্লেষকের মতে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র মানুষের ধ্বংসাবশেষ এবং মৃতদেহের ওপর নির্মিত হয়েছে। অথচ তারা আবার মানবাধিকার রক্ষার দাবিও করে। এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ার স্বাধীন এবং স্থানীয় এই সিনেটর চার্লস তৃতীয়কে লক্ষ্য করে ক্রোধ ঝেড়ে বলেছেন:

তোমরা আমাদের ভূমি ধ্বংস করেছ। তোমরা গণহত্যাকারী। এটা তোমার দেশ নয়। তুমি আমার রাজা নও। তুমি আমাদের রাজা নও।

থর্পের পরণে ছিল অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী একটি কোট। সেখান থেকে সরে যাবার আগ পর্যন্ত সে চীৎকার করে বলছিল: উপনিবেশবাদীর ওপর অভিশাপ।

অস্ট্রেলিয়ার সমালোচকদের মতে, ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের অধিকারের প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা দেয় না। শুধু তাই নয় স্থানীয়দের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্যও তারা কখনও কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। উল্টো যতটা সম্ভব তারা আদিবাসীদের অধিকার উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছে।

চার্লস তৃতীয়, লন্ডনের অধীনে দেশগুলোতে ভ্রমণ করে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় আদিবাসীদের সম্পর্কে কোনো কথা বলেন নি। এ বিষয়টি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয়দের ক্ষোভ ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটা এমন এক সময়ে ঘটলো যখন গাজা ও লেবাননের জনগণের ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলি গণহত্যার প্রতি লন্ডন সরকারের সমর্থনের কারণে ব্রিটেনের ব্যাপারে বিশ্ব জনমতের ভয়াবহ রকমের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে সেদেশের স্বাধীন সিনেটরের ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্রিটেনের সেই ঔপনিবেশিক চেহারার আরেকটি কালো পর্দা উন্মোচিত হলো।

সূত্র: পার্সটুডে।

Related Articles

Back to top button