মো. সফিউল্লাহ মুন্সী, টাইমস ২৪ ডটনেট: চলমান বিশ্বের এক পরিসংখানে প্রকাশ কিডনী রোগে পুরুষের তুলনায় নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশ্বের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পুরুষের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগী শতকরা ১২ শতাংশ পুরুষ আর নারী আক্রান্ত হয়ে থাকেন ১৪ শতাংশ। বিশিষ্ট কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনী বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সামাদ এ সব কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ কিডনী রোগ সর্ম্পকে যা বললেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, যাদের শরীর ফুলে যায়, ব্যথার ঔষধ খাওয়া, ধুমপান, বংশে যাদের কিডনী রোগী আছে এবং ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের কিডনী বিকলের ঝুঁকি বেশি।
সবার প্রস্রাবের দিকে নজর রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্রাবের রং যদি গাঢ় হলুদ হয় তাহলে বুঝতে হবে কিডনীর কোন সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন এর মুল কারণই হলো বেশি পানি না খাওয়া। তাই প্রতিদিন একজন সুস্থ মানুষের দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। যারা বাইরে রোদে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি পানি খাওয়া উচিত।
ডা. এম এ সামাদ বলেন, আবার অতিরিক্ত পানি খাওয়াও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই অতিরিক্ত পানি খাওয়া উচিত নয়। এতে বমি বমি ভাব ও মাথা ঘুরতে পারে। আবার একসঙ্গে দ্রুত অত্যাধিক পানি খাওয়াও ঠিক নয়। কিছুক্ষণ পরপর ধীরে ধীরে পানি খাওয়া উত্তম বলে জানালেন তিনি। এ বিষয়ে সবারই সতর্ক থাকা জরুরি।
কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. সামাদ আরো বলেন, হঠাৎ করে শরীরে চুলকানি হওয়াও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। তাই শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ, গলা ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এর আরও কয়েকটি লক্ষণ হলো, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও লালচে ভাব মেরুদন্ডের দুপাশে ব্যাথাভাব। সেইসঙ্গে তলপেট বা মূত্রনালিতে ব্যথা, ঘুম ঠিকমত না হওয়া, চোখের পাতা বা পা ফোলা, ত্বকের রং ফ্যাকাশে হওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, শরীরের রং কালচে হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসক দেখাতে হবে বলে তিনি মতামত দেন।
কিডনির রোগ শনাক্ত করার বিষয়ে বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই কিডনির সমস্যা শনাক্ত করা যায়। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হলে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হওয়া সম্ভব সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে। তবে কিডনির সমস্যা ধরা পড়লেই তা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই।
অধ্যাপক ডা. সামাদ বলেন, এক থেকে পঞ্চম ধাপে দিয়ে কিডনি ফেউলিওর হয়, তখন রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। তৃতীয় ধাপে থাকলে ওষুধের মাধ্যমে কিডনির ক্ষতির সম্ভাবনা কমিয়ে আনা সম্ভব। ফলে রোগী আরও বেশ কয়েকটি বছর সুস্থ থাকতে পারেন।
কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায় সর্ম্পকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, শরীরচর্চার বিকল্প নেই। দৈনিক আধা ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ১৫ মিনিট জোরে হাঁটলে গড়ে তিন বছর পর্যন্ত আয়ু বেড়ে যায়।
সেই সঙ্গে পাশাপাশি ধূমপানসহ নেশাজাতীয় সকল অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি বাদ দিলেও হার্ট অ্যাটাকসহ কিডনি রোগের ঝুঁকি কমবে। আর যাদের ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করাতে হবে। খাওয়ার বিষয়েও সাবধান হতে হবে। নিয়মিত ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন থাকুন।