মৌলভীবাজার প্রতিনিধি, টাইমস ২৪ ডটনেট: মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি এখন ৩ ভাগে বিভক্ত। বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ চলছে জেলা বিএনপিতে গ্রুপিং রাজনীতি। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেদের মতো ইউনিট কমিটি দেওয়া হচ্ছে। গত (১৭ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার গণতন্ত্র দিবস সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেখা যায় মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে মিছিল নিয়ে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে যোগদান করেছেন।
প্রথম গ্রুপ, জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের নেতৃত্বে ও জেলা বিএনপির সিনিঃ সহ সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুন, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আব্দুল মুকিত, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হেলু মিয়া, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকসি মিছবাউর রহমান এবং জেলা ছাত্রদের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহানের উপস্থিতিতে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
দ্বিতীয় গ্রুপ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মোশাররফ হোসেন বাদশা, মুহিতুর রহমান হেলাল সহ সম্পাদক জেলা বিএনপি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, জেলা ছাত্রদের সভাপতি রুবেল মিয়ার নেতৃত্ব কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে যোগদান করেছেন।
তৃতীয় গ্রুপ, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির ১ম সহ সভাপতি মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী ,জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আহমেদ, জেলা যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল, জেলা শ্রমিক দল সভাপতি রসিক খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জিএমএ মুক্তাদির রাজুর নেতৃত্বে এই গ্রুপটি গনতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সিলেটের র্যালিতে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী নিয়ে অংশগ্রহণ করে। বিগত ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রের অনুমোদন পায়। সভাপতি হন প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের বড় ছেলে এম নাসের রহমান। সাধারণ সম্পাদকের পদে আসেন সাবেক ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান। শুরুতে দুজনের নেতৃত্বে সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাসের রহমানের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে একক সিদ্ধান্তে মৌলভীবাজার পৌর কমিটি গঠন, কমিটি থেকে বিভিন্নজনকে বাদ দেওয়া, জেলা বিএনপিতে নিজের কোটার লোকদের ইচ্ছে মতো পদোন্নতি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন মিজানুর রহমান।
এর পর থেকে তিনি ও তাঁর নেতৃত্বাধীন অংশ আলাদা কর্মসূচি পালন শুরু করে। বর্তমানে দলের প্রায় সব কর্মসূচিই হচ্ছে পৃথকভাবে। সংগঠনের কার্যালয় না থাকায় নাসের রহমানের নেতৃত্বাধীন নেতা-কর্মীরা তাঁর গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার বাহারমর্দানে এবং মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন নেতা-কর্মীরা শহরের চৌমোহনা এলাকার একটি মার্কেটের একটি কক্ষে বসেন।
অপর দিকে জেলা বিএনপির তৃতীয় অংশ মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী,ফয়সল আহমেদ, জাকির হোসেন উজ্জ্বল, রসিক খান, জিএম এ মুক্তাদির রাজু সহ নেতৃবৃন্দরা শাহ মোস্তফা রোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে বসেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই দূরত্ব ঘোচাতে কেন্দ্রের আহ্বানে জেলা বিএনপির এক বিশেষ সভা হয়। সেখানে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই অংশ নেন। কিন্তু একই ছাদের নিচের এ অবস্থান বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। দুই পক্ষই আবারও আলাদাভাবে দলের কর্মসূচি পালন করছে।
জেলা পর্যায়ের এই বিভক্তির ছায়া পড়েছে উপজেলা গুলোতে।সাতটি উপজেলার মধ্যে অন্তত চারটিতে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আলাদাভাবে কর্মসূচি হয়ে থাকে। তিনটি উপজেলায় এককভাবে দলীয় কার্যক্রম চলছে।
জেলা বিএনপির আলাদা কার্যক্রম পরিচালনার কথা স্বীকার করে মিজানুর রহমান বলেন, সভাপতি একক সিদ্ধান্তে যখন যা ইচ্ছা করেন। এই কমিটি ভাঙেন, এই কমিটি গড়েন। সব উপজেলাতেই এর প্রভাব আছে।
জেলা বিনপির সহ সভাপতি মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতির স্বৈরাচারী আচরণের কারণে আজ বিএনপি তিনভাগে বিভক্ত।