জাতীয়

গ্রেফতারি পরোয়ানার মধ্যেই মঙ্গোলিয়ায় পুতিন

টাইমস ২৪ ডটনেট: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানার মধ্যেই মঙ্গোলিয়ায় গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী উলানবাটারে পৌঁছেছেন তিনি। গত বছর ১৭ মার্চ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এই প্রথম আইসিসির কোনো সদস্য দেশ সফরে গেলেন পুতিন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে পুতিনকে বহনকারী বিমান অবতরণ করার খবর প্রচার করা হয়। ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে রাশিয়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়ে ২০২৩ সালে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।

সাধারণত রোম চুক্তি অনুযায়ী, যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা আইসিসির সদস্য যেকোনো রাষ্ট্রে পা রাখলে গ্রেফতারের শঙ্কা রয়েছে। তবে আদালত কোনো দেশকে এ বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন না। আইসিসির সদস্য হওয়া সত্বেও উলানবাটোর পুতিনকে গ্রেফতারের আদেশ পালন না করলেও আদালতের তেমন কিছু করার নেই।

এদিকে, পুতিনকে গ্রেফতার করতে মঙ্গোলিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইসিসি, ইউক্রেন, পশ্চিমা কয়েকটি দেশ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। কিন্তু রাজধানী উলানবাটোর পৌঁছালে পুতিনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় মঙ্গোলিয়া।

রাজধানীর চেঙ্গিস খান স্কয়ারে দুই দেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে। পুতিনের সফর শুরুর আগের দিন অল্প কিছু মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘যুদ্ধাপরাধী পুতিনকে তাড়িয়ে দাও’।

সফরকালে পুতিনকে গ্রেফতার করার জন্য মঙ্গোলিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনও। তবে মঙ্গোলিয়া কখনোই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। রুশ অভিযানের সমালোচনা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি মস্কোর বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ভোটদানেও বিরত ছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গোলিয়ার নির্বাহী পরিচালক আলতানতুয়া বাতদোরজ বলেছেন, ‘পুতিন একজন অপরাধী। আইসিসির কোনো সদস্য দেশে নিরাপদে সফর করতে পারলে তার আগ্রাসী মনোভাব আরও বৃদ্ধি পাবে।’

আইসিসির সদস্যরা গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা কোনো ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে চুক্তিবদ্ধ। তবে কোনো দেশকে এই শর্ত মেনে চলতে বাধ্য করার সামর্থ্য সংস্থাটির নেই। পুতিনের একজন মুখপাত্র গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, সফরকালে রুশ প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতারের ভয়ে থাকতে হবে বলে মনে করে না ক্রেমলিন। কারণ সোভিয়েতের পতনের পর থেকে মঙ্গোলিয়া বেইজিং ও মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছে।

এদিকে মঙ্গোলিয়া সফরের আগে সোমবার ইউক্রেনকে সতর্ক করেছেন পুতিন। রাশিয়াকে থামানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সোমবার সাইবেরিয়ায় শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ মন্তব্য করেন তিনি। পুতিন আরও বলেছেন, তার দেশের সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অনুপ্রবেশ ব্যর্থ হচ্ছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, সম্পতি ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক ও খারকিভ অঞ্চলের তিনটি গ্রাম দখল করেছে তারা। গ্রামগুলো হচ্ছে দোনেৎস্ক ও পোকরোভস্ক শহরের মাঝামাঝি অবস্থিত নোভোজেলেন, খারকিভ অঞ্চলের সিঙ্কিভকা এবং দোনেৎস্কের কোস্তিয়ানতিনিভকা। সোমবার নতুন করে পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের আরও একটি গ্রাম দখলদের দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে অনেকটা ঢুকে পড়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা। চলতি বছরের ৬ আগস্ট রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ঢুকে পড়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এরই মধ্যে অঞ্চলটির এক হাজার ৩০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকার দখল নিয়েছে তারা। বিভিন্ন স্থানে টাঙানো হয়েছে ইউক্রেনের পতাকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার মাটিতে এ ধরনের হামলা এটিই প্রথম। এ ঘটনায় বেশ উজ্জীবিত হয় ইউক্রেন।

দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল পূর্ব ইউক্রেন থেকে রুশ বাহিনীকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘প্রতিশোধ কী জিনিস তা অনুধাবন করবে রাশিয়া। তারা আমাদের ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের ভূখণ্ডে রাশিয়া যা (দখলদারিত্ব) করতে চেয়েছিল সেটি এখন তাদের নিজ ভ‚খণ্ডেই ফিরে এসেছে। এখন বুঝুক তারা আসলে কী করেছে। ইউক্রেনীয়রা জানে কীভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়।’ রাশিয়ার কাছ থেকে দখল করা অঞ্চলগুলোকে ‘বিনিময় তহবিল’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে মস্কোর দখল করা অঞ্চলগুলোর সঙ্গে এগুলোর বিনিময় হতে পারে।

সূত্র: আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস।

Related Articles

Back to top button