চলতি সংবাদ

দেশে কাঁচা চামড়ার দাম কম, ভারতে পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাংলাদেশে পশুর কাঁচা চামড়া বিকোচ্ছে জলের দরে। এবার বকরি ইদে সারা বাংলাদেশে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি গবাদিপশু কুরবানি হয়েছে। অবশ্য গতকাল মঙ্গলবারও পশু কুরবানি হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। এ বছর সবচেয়ে বেশি পশু কুরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। গতকাল মঙ্গলবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রক থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার ইদের দিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় অননুমোদিতভাবে কাঁচা চামড়া কেনাবেচা করায় মৌসুমি পাঁচ চামড়াব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাস্তার পাশে ট্রাক-ভ্যান স্থাপন করে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে চামড়া কেনাবেচা করছিলেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এজন্য পাঁচ ব্যবসায়ীকে ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী আধিকারীক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, কেনা দামেও তারা চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারি দামে তো সাড়া মেলেইনি। তাই মুনাফার আশায় এবারও ভারতে চোরাইপথে চামড়া পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।চোরাই পথে ভারতে কুরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে বিজিবি সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে। এরই মধ্যে যশোরের সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও পুলিশ টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।গতকাল মঙ্গলবার সকালে যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত সীমান্তে এ সতর্কতা জারি থাকবে। সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য প্রশাসনেরও নজরদারি রয়েছে।
তবে বাংলাদেশের চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এবার পাচারের শঙ্কা রয়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। গত কয়েক বছর ধরে দেশের বাজারে চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় পাচারের শঙ্কা বেড়েই চলেছে।চামড়া ক্রেতা মশিয়ার রহমান জানান, ৭০০ টাকায় কেনা চামড়া বিক্রির সময় ৫০০ টাকা বলছে। আর ছাগলের চামড়ার দাম ৫০ টাকা। এরকম দাম থাকলে চামড়া পাচার হতে পারে মন্তব্য করেন তিনি।চামড়া বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে নানা অজুহাত দেখিয়ে সেই দাম দেওয়া হচ্ছে না। এবার লোকসান গুনতে হবে।
যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি সুমন ভক্ত জানান, কুরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার পাশাপাশি পুলিশও কাজ করছে। সীমান্ত অভিমুখে প্রবেশের সময় চালকদের জিজ্ঞাসাবাদসহ ও যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে।যশোরের বেনাপোলসহ শার্শার সীমান্ত দিয়ে ভারতে চামড়া পাচার প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সতর্কতা জারি করেছে।
সীমান্ত থানা শার্শার বিভিন্ন এলাকায়, পাঁচ মণ ওজনের গরুর চামড়া সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ এবং ১০ মণ ওজনের গরুর চামড়া ছয়শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ মণ ওজনের গরুর চামড়া চারশ’ থেকে ছয়শ’ রুপি ও ১০ মণ ওজনের গরুর চামড়া আটশ’ থেকে হাজার রুপি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। বাংলাদেশের ১০০ টাকায় ভারতে ৭০ রুপি মেলে। যশোরের যেসব সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকে সেসব এলাকাকে বেশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেমন বেনাপোলের গাতীপাড়া, বড়আঁচড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা, ধান্যখোলা, পুটখালী ও গোগা, কায়বা, অগ্রভুলোট, রুদ্রপুর, কাশিপুর, শিকারপুর, শালকোনা এবং শাহজাতপুর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, এবার ঢাকার মধ্যে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম সরকার নির্ধারণ করেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর সবচেয়ে ছোট চামড়াটিও কমপক্ষে ২৫ বর্গফুট হয়। আর বড় চামড়াগুলো হয় ৬০ বর্গফুট পর্যন্ত। অথচ লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া কেনা হয়েছে ১০ থেকে ২৫ টাকা করে। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী শেখপাড়া গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মো. রফিক বলেন, ‘এবারও চামড়ার দাম বাড়েনি। উপজেলার অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি ছাগল দিয়ে কুরবানি দিয়েছি। ১৪ হাজার টাকায় কেনা ছাগলের চামড়াটি নেওয়ার জন্য কেউ আসেনি। এ কারণে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিয়েছি।’তবে গত বছরের তুলনায় এবার চামড়া প্রতি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।’ জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, এবার বকরি ইদে চট্টগ্রামে আট লাখ ৮৫ হাজারের মতো পশু কুরবানি হয়েছে।

Related Articles

Back to top button