আন্তর্জাতিকজাতীয়

রোববার সন্ধ্যায় মোদির শপথ অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ

টাইমস ২৪ ডটনেট, দিল্লী থেকে: নরেন্দ্র মোদি রোববার সন্ধ্যায় টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিবেন। মোদির দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে সমর্থন দেয়। এরপরই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানিয়েছেন। মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি দিল্লি সময় বেলা ১১টা ৫১ মিনিটে অবতরণ করে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে ফ্লাইটটি। নয়াদিল্লিতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন তিনি। এরপর ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া শপথ অনুষ্ঠানের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার নয়াদিল্লিতে কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সোমবার বিকেল ৫টায় (নয়াদিল্লি সময়) পালাম এয়ার ফোর্স স্টেশনে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময়) তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
জানা গেছে, টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের সরকারপ্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সব আয়োজন গতকাল শনিবারই গুছিয়ে আনা হয়েছে। রোববারের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে দিল্লিতে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ বিদেশি নেতা। আর সবমিলিয়ে এই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা হবে ৮ হাজার। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিñিদ্র করতে এরই মধ্যে রাজধানীর দিল্লিতে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতকর্তা। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন। মোদীর শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানস্থল রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঁচ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান ছাড়াও এনএসজি কমান্ডো, ড্রোন এবং স্নাইপার নিয়ে বহুস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান চলার সময় যেকোনো অপরাধমূলক বা সন্ত্রাসী হুমকি রোধ করতে দিল্লিতে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধ ৯ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বিদেশি অতিথিদের হোটেলে বিশেষ প্রোটোকলসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে লীলা, তাজ, আইটিসি মৌর্য, ক্ল্যারিজেস এবং ওবেরয়ের মতো নামি হোটেলগুলো। অতিথিরা হোটেল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন নির্দিষ্ট পথে। এ সময় বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ এবং ডাইভারশন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্তেও শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি। আচ রোববার মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম নীতির’ অংশ হিসেবে মালদ্বীপ ছাড়াও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল, মরিশাস এবং সেশেলসের নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। নরেন্দ্র মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় ২৭-৩০ জন সদস্য থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হবেন এনডিএ জোটের সদস্য। সঙ্গে কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীও থাকতে পারেন। অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশন ১৫ জুন নাগাদ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দু’দিন যাবে নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথগ্রহণে। এরপরে নতুন স্পিকার নির্বাচন করা হবে এবং রাষ্ট্রপতি লোকসভা ও রাজ্যসভার একটি যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন, অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। প্রথম আগামী ২২ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আগের দুই মেয়াদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া বিজেপি এবার লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে মাত্র ২৪০টি আসন পেয়েছে। সরকার গঠনের জন্য ২৭২ আসন প্রয়োজন। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩টি আসন জিতেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ২৩২টি আসন জিতেছে, এর মধ্যে এককভাবে কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন।
সূত্র জানায়, গত শুক্রবার ভারতের পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এনডিএ জোটের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে মোদি বলেন, আমাদের গত ১০ বছর ছিল শুধু ‘ট্রেলার’। আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। এ সময় কংগ্রেসের সমালোচনা করে মোদি বলেন, এবারের নির্বাচনেও কংগ্রেস ১০০ আসন জিততে পারেনি। বিজেপি এবার ২৪০ আসনে জিতেছে। গত তিন নির্বাচন মিলেও এত আসনে জিততে পারেনি কংগ্রেস। ইন্ডি জোটের লোকেরা আস্তে আস্তে ডুবছিল, এবার আরও দ্রুত গতিতে ডুবে যাবে।
নতুন জোট সরকার টিকিয়ে রাখতে নরেন্দ্র মোদিকে যাদের ওপর নির্ভর করতে হবে তাদের একজন হলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বৈঠকে তিনি বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, নরেন্দ্র মোদি ভারতের উন্নয়ন করবেন এবং আমরা তাকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করব। আমরা সবাই আপনার নেতৃত্বে কাজ করব। আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, ভারত সঠিক সময়ে সঠিক নেতার নেতৃত্বে রয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত আগামী পাঁচ বছরে প্রথম অথবা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।
এরপর মোদি প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানী, মুরলী মনোহর জোশী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে রাইসিনা হিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান মোদি। সেখানে তৃতীয় বারের মতো এনডিএ জোট সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে আবেদন জানান তিনি।
নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে আবারও বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এবারের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় মন্ত্রণালয় ভাগাভাগি। অর্থাৎ জোটের শরিকদের কোন কোন মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে তা ঠিক করা হবে। যদিও এ বিষয়ে এরই মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এর আগে এনডিএ জোটের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাইডু ও নীতিশ কুমার এরই মধ্যে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। ফলে তাদের আর সরকার গঠনে বাধা নেই। তবে নতুন সরকারের মন্ত্রণালয় ভাগাভাগি নিয়ে চলছে দরকষাকষি। জোটের সদস্যরা এবার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় চাইছে। কারণ জোটের ওপর নির্ভর করেই এবার সরকার গঠন করতে হচ্ছে মোদিকে।

Related Articles

Back to top button