টাইমস ২৪ ডটনেট: বাংলাদেশে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার নৃশংসভাবে খুন হয়েছে। বুধবার সকালে কলকাতায় নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাট থেকে খণ্ডিত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিভাবে এ হত্যালাণ্ড ঘটল এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সদস্যরা। ঝিনাইদহের এই আসনটি সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা। এখন পর্যন্ত যাদের এ ঘটনার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা সবাই বাংলাদেশি। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার এক শোকবার্তায় সংসদ সদস্য আনারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশি সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। গত ৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর গতকাল বুধবার সকালে কলকাতার নিউ টাউনের বিলাসবহুল আবাসন ‘সঞ্জিভা গার্ডেনে’ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এই এমপির হত্যার খবর পাওয়া যায়। এমপি আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় তার যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাস গতকাল বুধবার সকালে পুলিশের কাছ থেকে এমপি আজিমের হত্যার খবর পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পুলিশের ধারণা, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে খুন করা হয়েছে। তবে তাকে কে বা কারা, কেন খুন করেছে; এ বিষয়ে এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। এরইমধ্যে নিউ টাউন থানার পুলিশ এবং বিধান নগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ ও এইচডিএফ কর্মকর্তারা তদন্তে নেমেছেন। ওই আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তারা।
এদিকে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস জানিয়েছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে অফিশিয়ালি কোনও তথ্য তাদের জানানো হয়নি। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর তারা (উপ-দূতাবাসের কর্মকর্তা) দুই দেশের পুলিশ ও তদন্তকারীদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তদন্তকারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে কাজ করছিলেন। চিকিৎসা করাতে গত ১২ মে দুপুরের দিকে দর্শনা-গেদে সীমান্ত হয়ে ভারতের কলকাতায় যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। প্রথম দুদিন যোগাযোগ থাকলেও ১৪ মে থেকে পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে আনোয়ারুলের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে ভারতের দিল্লি দূতাবাস ও কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে ওই সংসদ সদস্যের খোঁজে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। সংস্থাটি জানায়, দিল্লি ও কলকাতা দূতাবাসের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই তার খোঁজে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ।
আরও জানা গেছে, কলকাতায় যাওয়ার পর শহরের অদূরে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে পৌঁছান তিনি। এর মধ্যে ‘বিশেষ প্রয়োজনের’ কথা বলে গোপালের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান আনোয়ারুল আজিম। পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় লিখিত ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন গোপাল বিশ্বাস।
সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ হওয়া থেকে শুরু করে লাশ উদ্ধারের খবর পর্যন্ত পুরো সময়টা রহস্যে ঘেরা। তিনি কীভাবে নিখোঁজ হলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল যার বাসায় উঠেছিলেন, সেই স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, লাশ উদ্ধারের খবর গোপাল বিশ্বাস কোথায় পেলেন, আর এখন সেই লাশ কোথায়? কলকাতা পুলিশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য দেয়নি।
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের কথিত বন্ধু কলকাতার বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বলেছেন, তার বাড়ি থেকে একজন আনোয়ারুলকে গাড়িতে তুলে দিতে গিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি সে সময় দেখেন, গাড়িতে চালক ছাড়া আরও একজন ছিলেন। এমপি পেছনের সিটে বসেন। নিউ টাউনের একটি আবাসনেও ছিলেন আনোয়ারুল আজিম। গোপাল বিশ্বাস বলেন, এনকোয়ারি অফিসার আমাকে কিছু বলেননি। শুধু এটুকু বলা হয়েছে, যে গাড়িতে আনোয়ারুল আজিম উঠেছিলেন তার গাড়িটি ট্রেস করা গিয়েছে। কে ড্রাইভার ছিল তা জানা গেছে। কিন্তু এমপিকে কোথায় নিয়ে গেছে, তা জানা যায়নি। আমাকে বলেছিলেন বিকেলে ফিরে আসবে। কিন্তু ফিরে না এসে বিকেলে মেসেজ পাঠান যে তিনি দিল্লি চলে যাচ্ছেন। পরের দিন দিল্লি পৌঁছে আবার মেসেজ দেন যে তিনি দিল্লি পৌঁছে গেছেন। ১৭ মে এমপির মেয়ে ফোন করে জানান বাবার খোঁজ পাচ্ছেন না। তখন থেকেই আমরা খোঁজ করছি। খোঁজ না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছি।
কলকাতা পুলিশ এখন সংসদ সদস্যের সঙ্গে গাড়িতে থাকা ব্যক্তির খোঁজ করছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, ১২ মে কলকাতায় যান এই সংসদ সদস্য। সেখানে তিনি যে ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন, সেখানে তার সঙ্গে আরও তিন জন ছিলেন। ১৩ মে বাড়ি থেকে ভাড়া করা গাড়িতে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বের হন তিনি। তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে কলকাতা বিধান নগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মানব শ্রিংলা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাবচালক জানিয়েছে, ১৩ মে যে ব্যক্তিকে তিনি গাড়িতে তুলেছিলেন, তাকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে লাশ ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে কিনা অথবা তার মরদেহ পাওয়া গেছে কিনা, সেই বিষয়ে কলকাতার পুলিশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিস্ট ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে তারা প্রথমে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বহনকারী ক্যাবচালককে আটক করেন। সেই ক্যাবচালক তাদের জানিয়েছেন সংসদ সদস্য আজিমকে তার গাড়িতে তোলার পর আরও তিন জন গাড়িতে ওঠেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। পরে এই চার জন কলকাতা নিউ টাউনের ওই বাড়িতে যান। সিসিটিভি ফুটেজে ওই চার জনকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। পরে তিন জন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেও তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে আর দেখা যায়নি।
এটিএফ (অ্যান্টি-টেরোরিজম ফ্রন্ট) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে পুরুষ দুজন বাংলাদেশে ফিরে যান। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো হলে তারা সেই দুজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের দেওয়া তথ্য কলকাতার পুলিশকে জানানো হয়েছে। এরপরই এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। নিউ টাউনের ফ্ল্যাটের ভেতরে রক্তের দাগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সেটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে এখন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস সূত্র বলেছে, এখানে রহস্যের কিছু নেই। যা ঘটেছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রিফিং করেছে। আবারও যদি আমাদের দিক থেকে কোনও তথ্য আপডেট হয়, সেটাও মন্ত্রণালয় থেকেই জানানো হবে। গত দুই-তিন দিন ধরেই যোগাযোগ হচ্ছিল দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে।
অপরদিকে সংসদ সদস্যে আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে চলছে শোকের মাতম। আনোয়ারুল আজীমের আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন তার বাড়িতে।
গত ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার অন্তর্গত ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দা এমপি আনোয়ারুলের দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। মূলত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে ওই বন্ধুর বাড়িতে যান এমপি আনোয়ারুল।পরদিন ১৩ মে দুপুরে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর বাসায় ফিরে আসেননি। উল্টো দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে জানান তাকে আর ফোন করতে হবে না, দরকার হলে তিনি ফোন করেন গোপাল বিশ্বাসকে। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনোভাবেই তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবে উৎকণ্ঠা ছাড়ায় তার বাংলাদেশের বাসায়। পাশাপাশি গোপাল বিশ্বাসও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এরপরই কোনো উপায়ান্তর না দেখে গত ১৮ মে শনিবার বরানগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন গোপাল বিশ্বাস। অভিযোগ পেয়ে বরানগর থানা তদন্তে নামে।
বাংলাদেশের এই সংসদ সদস্য নিখোঁজ হওয়ার পর তার খোঁজে নেমে তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা জানতে পারে কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনো জায়গায়। গত ১৯ মে ঢাকার মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি তার বাবাকে খোঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আনোয়ারুল আজীম আনার ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে, পরিকল্পিতভাবে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, কারা কারা খুন করেছে তা জানতে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ কাজ করছে। গতকাল বুধবার নিজ বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত তিনজন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনের সঙ্গে ভারতের কেউ জড়িত না। বাংলাদেশিরা খুন করেছে। সেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারত আমাদের যথেষ্ট কো-অপারেশন করছে।
বাবার হত্যার বিচার চান সংসদ সদস্যর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ের সামনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এইটা আমি দেখতে চাই।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মেয়ে থানায় মামলা করবেন। আমাদের কর্মকর্তারা তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন। নিহত এমপির মেয়ে ডরিন আমাদের কাছে এসেছেন। তার বাবা বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন, এরপর আর তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে কী ঘটেছে, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করার জন্য এসেছেন ডরিন। তার বাবা সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। আমরা তাকে বলেছি শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করতে। মামলা করতে আমাদের কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করছেন। মামলাটি বুধবারই মধ্যেই হবে। এই ঘটনাটি মর্মান্তিক। তিনি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। তার এলাকার মানুষ স্তম্ভিত। আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। এটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড এটা মনে করেই তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশি অপরাধীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনবো। বিচারের মুখোমুখি করবো। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইজি সিআইডি অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার হয়নি। তার মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করেনি কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ মে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। সংসদ সদস্যের পরিচিত গোপাল বিশ্বাস এই অভিযোগ দায়ের করেন এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা তদন্ত শুরু করি। তিনি বলেন, এর জন্য ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট থেকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। এরপর গত ২০ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কেসটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার একটি নির্দেশ আসে। এরপর ২২ তারিখে আমাদের কাছে একটি তথ্য আসে যে, তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। এরপরে পুলিশ এই ফ্ল্যাটটিকে শনাক্তকরণ করে। কারণ এখানেই তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে আরও তদন্ত চলছে। সিআইডি এই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি এখনই বলা সম্ভব নয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফটোগ্রাফি সব টিমেকে এই তদন্তে ইনভাইট করা হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দুই দেশের কোনো বিষয় নয়। এ হত্যাকাণ্ডকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি এটিকে পরিকল্পিত বলে জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আনোয়ারুল আজীমের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক, মর্মান্তিক ও অনভিপ্রেত। যে ফ্ল্যাটে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কলকাতা পুলিশ সেখানে প্রবেশ করেছিল। হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা কয়েকজনকে সেখানকার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একটি কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে বিস্তারিত আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে। আমরা আমাদের মিশনের মাধ্যমে খবর রাখছি এবং মিশন কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও খোঁজ রাখছে।