সৈয়দা রাশিদা বারী: মানুষের সমস্যার অনেক ধাপ, অনেক সিঁড়ি। পারিবারিক সমস্যা, পারিপার্শ্বিক সমস্যা, শারীরিক সমস্যা, মানুষিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা প্রভৃতি। এ সমস্ত সমস্যা সবারই থাকে খুব কমন বিষয়। ধনীদেরও আছে। গরিবের তো থাকবেই। প্রেম করে যারা বিয়ে করে, তাদেরও আছে। উচ্চ বৃত্ত ও উচ্চ শিক্ষিতর আছে, অধম মূর্খ নিরক্ষর এর আছে। বহুতল প্রাসাদ অট্টালিকা বাসির আছে, রাস্তায় বসবাস বা বস্তিবাসীর আছে। আর এই সমস্ত মোকাবেলা দেওয়ার নামই জীবন। জীবন মানেই বেঁচে থাকা। কাজেই কোন বিপদেই ভেঙে পড়তে হয় না। মহান স্রষ্টা, আল্লাহ বিধাতা, ভগবান ঈশ্বর তার বান্দাদের নিয়ে খেলেন। কিন্তু সেটা বান্দাদের কষ্ট বিপদে পরিনত হয়। অথচ এটা দিয়ে তিনি তার চাহিদা মতো, বলা যায় সুখ-আনন্দ-রহস্য কৌতুহলে মজে খেলা করেন এবং উদ্ধার করার জন্য পাশেই থাকেন। তবে সবার চলার পথ অর্থাৎ জীবন সমান করবেন না। কেননা তিনি তো তার চাহিদা মতো, তার দুনিয়ায় রেখে, আনন্দ মিটাবার জন্যই মানুষ সৃষ্টি করেছেন। এবং মানুষকেই করেছেন তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। গুণ ও মেধাই স্বয়ং সম্পন্ন করে, কথা বলার- মনের ভাব প্রকাশ করার শক্তি দিয়ে, মানুষ জাতিকে দুনিয়াতে এনেছেন তার চাহিদার জন্য। আর জ্ঞানে ধ্যানে যোগ্য হওয়ার শক্তি দিয়েছেন বলেই মানুষ জাতির বিচার করবেন। পৃথিবীর কোন জীব বা প্রাণীর বিচার করবেন না। আল্লাহ মানুষের ভালো থাকার সুব্যবস্থায় দুনিয়ার যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। আবার এই মানুষকে নিয়ে যেমন ইচ্ছা ভাগ্য নির্নয় করে, নির্ধারণ করে, খেলা করে আনন্দ উপভোগ মজা লুটবেন এটায় তো বিধাতার লীলা খেলা। এখানে সবার জীবন সমান হলে মজা আনন্দ করা হবে না। আমাদেরও হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান নয়। সমান হলে কাজ কিন্তু ভালো করা যেত না। একই পেটের সন্তানও সবাই যেমন এক রকম চেহারা আকৃতি ও রং ঢং কর্মকান্ডে যোগ্যতা হয় না। আমাদের সংসারেও সবই যদি একই জিনিসপত্র মিটার হয়, আমাদের প্রয়োজন সংসারে মিটবে, বা ঘুচবে না। আর দুনিয়ার যাবতীয় এবং নানা শ্রেণীর মানুষ, নানা প্রাণী এটা তো মহান স্রষ্টার সংসার। স্রষ্টা তার সংসারের চাহিদা মতই যার যেমন প্রয়োজন মনে করেন, তেমনি বলবদ্ধ রাখেন। আমাদের হাতে থাকে না তার এই বিচার ব্যবস্থা। তবে কিছুটা থাকে সেটা হল যার যার সাধনা তাকওয়া চাওয়া এবং কর্ম যোগ্যতার মধ্যেই তিনি তার বান্দাদের কাজের দায়ীত্বে¡ রাখেন। তারই সংসারের আয়ত্ত্বে প্রয়োজনের জায়গায় সেটেল করেন। তাই জন্যই তো চেষ্টা তথা সাধনা করতে হয় এবং সেটার অনুমতি তিনি দিয়েছেন। পদবী, ডেজিনেশন, জ্ঞান-বিদ্যা, অর্জন মতো। তিনি তার থেকে চেয়ে নিতে বলেছেন। চাওয়া মানেই কিন্তু নত হওয়া, নত স্বীকার এটাও বুঝতে হবে। কেঁদে নত হয়ে তার কাছে নিজের রুচি শপে বা বিসর্জন দিয়ে, আত্মসমর্পণ করে চেয়ে নিতে হয়। আমাদের কিন্তু শিখতে হবে তার কাছে চাওয়া। সেটাও তো অধ্যাবসাই অর্থাৎ স্টাডির বিষয়। মনে রাখতে হবে আল্লাহ পাক কান্নাকে অতিশয় পছন্দ করেন। তাইতো কষ্ট দিয়ে কাদান এবং কান্নার মূল্যও দেন। আর বুঝ থাকতে হবে, আমরাও কিন্তু জীবন পথে, মানুষ দিয়ে কাজ করাই। সহযোগিতা নেই, যার যে যোগ্যতা সেই অনুপাতে তার থেকে। বিধাতা পুরুষও তেমনি ভাবে তার বান্দাদের খুঁজে বেছে, তার দুনিয়ার সংসারের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে চাহিদা মেটান। এখন সবাই যদি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়, ঝাড়ুদার সুইপার হবে কে? রিক্সাওয়ালা হবে কে? খাদ্য দ্রব্য রান্না করে খাই, কে হবে বিক্রেতা বা উৎপাদনকারী? আসলে দুনিয়াতে সব শ্রেণীর মানুষেরই তো দরকার তাই না? আমাদেরই জীবন চলার পথে- আমাদেরই দরকার। তাই আমাদের বেঁচে থাকা এবং সেবার জন্যই তিনি আমাদেরকে নিয়োগ দেন। শুধু যোগ্যতা অর্জন হিসেবে তার কাছে পরীক্ষায় পাস করে আদায় করে নিতে হয়। এবং তিনিও সেভাবেই দেন, তার সংসার ঠেকানোর প্রতি লক্ষ্য রেখে। যে কারণে তার প্রতিও মুখ করা, অসন্তুষ্ট থাকা যাবে না। তিনি অতি মহান যা কিছু দিয়েছেন, যা কিছু করেছেন, বল্লামই তো মানুষেরই ভালো থাকার, ভালো রাখার জন্য। সবাই যদি প্রভাবশালী হয়, সবাই যদি মহল্লা বাসী হয়, ভাড়াটিয়া হবে কে? দান খয়রাত কাকে দেবে? মানুষেরও সংসারে সব একই জিনিস হলে সংসার হয় না, নানা রকম জিনিস লাগে। তাই আল্লাহর দুনিয়ার আল্লাহর সংসারে মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছেন বহুরূপী, বহু ধরনের করে। মানুষেরও প্রয়োজন মতো তার থেকে চেয়ে উদ্ধার হয়ে, প্রয়োজন মেটাতে হবে। ভেঙে না পড়ে, নিরাশ না হয়ে।