মতামত

একই সুতায় গাঁথা ৩প্রজন্মের ৩জন মহিয়সীই-বাংলাদেশের যুগান্তকারী সূর্য নিশান

সৈয়দা রাশিদা বারী: আমি ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে পিছনে রেখে অথবা সামনে রেখেই এই দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা বিনিয়োগ করে বলছি— ৩জন নারীর কথা। ২জন প্রয়াত এবং ১জন আল্লাহর অশেষ রহমতে এখনও ধরার বুক আলোকিত করে আছেন। যিনি ঐ দুই সম্মানীয় প্রয়াতর প্রজন্ম। এই পর্যায়ে আমি তাদেরকে নিয়ে আলোচনায় আসতেই একটু আমার মতো করে ডিসকাশনের চেষ্টা করছি। দেখুন ‘গরম ভাতে বিড়াল বেজাড়, উচিত কথায় চাচী বেজাড়’ এমনটা তুলে ধরে বা জাগিয়ে তুলে বলাই যে, আমার স্বভাব ধর্ম, ঠিক তা নয়। এটার বাংলা কথা হলো খুঁচিয়ে বের করা বা সামনে আনা। অর্থাৎ দোষ ধরা-যেটাকে বলে উচিত কথা। আসল কথা হলো আমি নারী জাতির অবদানের ব্যর্থতা ভাবতে চাই না। নারীর প্রকৃত গুণ এবং যোগ্যতার প্রকৃত মর্যাদা স্বীকৃতি পাওয়া দেখতে চাই। কিন্তু সেটা তো ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। চাপ সৃষ্টি করে বের না করলে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ভাষায় ‘এ পৃথিবীতে যত মহান কাজ আছে, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ সেটাতো ঠিক আছে বটেই। আমি প্রিয় কবি কাজী নজরুলের এই বাণীটির প্রতিও অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল। তবে তার বাইরেও আমি আমার গবেষণা ও অনুভূতি থেকে মনে করি বা বলবো, পুরুষের যত অর্জন আছে, তা সম্পূর্ণই নারীর অবদানের ফসল। এখানে উদাহরণটা এ দেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দিয়েই ধরা যাক। তার এতো বিশালভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে মোট ৩জন নারীর অবদান অনস্বীকার্য। ১. তার মা, ২. তার স্ত্রী, ৩. তার সুযোগ্য কন্যা। আমার সাহিত্য— সাংস্কৃতিক মনের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি অন্তত পক্ষে মনে করি। হ্যাঁ বঙ্গবন্ধুর মা শেখ সাহারা খাতুনের অবদান সর্বপ্রথম। যেটা জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা ও জীবনে স্বপ্ন বোনা সৃষ্টির কভারেজ। জনকূলেও এটাই প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ— গন্তব্যস্থল, প্রথম ধাপ। এরপরেই রয়েছে মুজিবের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছার অবদান। তিনি স্বামীর বড় হওয়ার প্রয়োজনে নিজের প্রয়োজন ছাড় দিয়েছিলেন। এটাই হলো একজন স্ত্রী হিসেবে তার পক্ষ থেকে সমসাময়িক রানিং বড় সমর্থন, বড় শক্তিবল প্রয়োগ। পরবর্তী ধাপ মরণোত্তর, তারই কন্যা— তার জন্য অর্থাৎ বাবার ইচ্ছা পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন একশত ভাগ। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন পেয়েছিলেন যথা সময়ে বিশেষ করে তার শিশু থেকে বেড়ে ওঠা ও জীবন গড়ার শুরুতে মায়ের হতে সঠিক আদর্শ জ্ঞান ও আর্শিবাদ ইত্যাদি। তেমন ফজিলাতুন নেছার মতোন নির্ভেজাল নির্লোভী নিঃস্বার্থ পরায়ণ স্বদেশীয় প্রেমিক স্ত্রী পেয়েছিলেন। যে স্ত্রী স্বামীর মন বুঝতেন। মনের শান্তি স্থাপন করতেন বা মূল্যায়ন দিতেন। মৃত্যুর পরে পেয়েছেন তার নিজের কন্যাকে— যে কন্যা বাবার নির্মিত দেশের কল্যাণে নিজের জীবনও যেন উৎসর্গ করতে পারেন। আর এ ৩জনই তো নারী। যে জন্যই কিন্তু পেরেছিলেন বাংলা ভাষাকে শত্রুমুক্ত করতে ও বাংলাদেশকে দুষ্কৃতদের কবল থেকে উদ্ধার বা জয় করতে। পেরেছিলেন ২ পর্যায়ের থেকেই পাকিস্তানী মুনাফিকদের পরাস্ত করতে। রক্ষা করতে মাতৃভাষা মাতৃভূমি ও প্রিয় মানুষ, কলিজার দেশবাসীকে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও, মা ফজিলাতুন নেছার মতোন ত্যাগী গর্ভধারিণীর গর্ভে জন্ম লাভ করেছিলেন বলেই কিন্তু তিনিও নিঃস্বার্থভাবে বাবার প্রতিষ্ঠিত সেই বাংলাদেশের ভার বহন করেছেন এবং এখনও করছেন মাশাল্লাহ। বাংলাদেশে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের বয়সকাল বা সময় যেটায় ধরি— ১৯৯৬ তে ১বার ধরে ৫বার মানে ২৫বছর। একটানা ২০ বছর … ইনশাল্লাহ— আল্লাহ ভরসা। অবশ্যই তার উপরে পীর আউলিয়ার আশীর্বাদ থাকবে, জনগণের ভালোবাসায়। হ্যাঁ মাননীয় শেখ হাসিনা বাবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে চলেছেন আল্লাহর দয়ায়। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস চালুসহ অনেক কিছু তার প্রমাণ। তবে অবশ্য বঙ্গবন্ধুর রক্ত বঙ্গবন্ধুর কন্যার দেহে বইছে বলেও এতো সাহস নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, মাটি ও মানুষের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়ে। বেঁচে থাকা ছাড়া দাদী শাহারা খাতুন মা ফজিলাতুন নেছার মতোন তিনিও তো কিছু চান না? বাবার হাল ধরে জনগণের স্বার্থে কাজ করে বাকি জীবন কাটাতে চান, শেখ হাসিনাও দেশকে ভালবেসে দেশের মাটিতে থেকে। আর তিনি বাঙালী ডাল রান্না, ভর্তা, ভাজি, ছোট মাছ চর্চরী যেমন খান। তেমন পরিধানও করেন বাঙালী বস্ত্র, তাঁত, সিল্ক, সূতি প্রভৃতি শাড়ি। সব থেকে বড় কথা হলো সেটা হতে হবে বাংলাদেশী পণ্য। সত্যি তার পছন্দ ও চাহিদা কতো সুলভ সাবলীল যা ধারণাও করা যায় না। অন্যদিকে অতি সামান্য। কম, অল্প অর্থাৎ তিনি অল্পেই তুষ্ট। কিন্তু ব্যাপক বিবেকবান – সৃজনশীল মানসিকতার, মনোরম, অসামান্য ও অমায়িক সকল দিক দিয়ে। সব কিছুতেই তার পছন্দ নিজের দেশকে ঘিরে। এটি একটি ভালো দিক। বাংলাদেশী উৎপন্ন খাবার খাওয়া, বাংলাদেশী বস্ত্র পরিধান ও ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশী পণ্যে তিনি তুষ্ট। চলন বলনেও বাঙালীপণা। তাই একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মধ্যে কোন ভাব সাব, মুড বা আত্ম অহংকারের ছাপ নেই। এটাও কিন্তু তার দাদী এবং মায়ের থেকেই অর্জিত প্রতীক আমি যেটা মনে করি। অর্থাৎ এই রুচি আদর্শ পছন্দ ও অভ্যাস কি না, তার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত প্রতিকৃতি। আমার গর্ব এই জন্য যে, আমি কিন্তু শেখ সাহারা খাতুন এবং শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ত্যাগ, অবদান, হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে উপলব্ধি করি বুঝতে পারি। এবং অন্তরের মণিকোঠায় লালন ও ধারণ করি। প্রথম জীবন এবং মাঝ জীবনে প্রকৃতই মা ও স্ত্রীর সহযোগিতা ছাড়া পৃথিবীর কোন পুরুষ, এমন অমর স্বাক্ষর বা অমরত্ব লাভ করেছেন বলে মনে হয় না। যে কিনা একটি দেশের স্থপতি হতে পারেন। প্রতিটা মানুষেরই লক্ষে পৌছাতে এরকম একটা অবস্থানে আসতে প্রথমে লাগে গর্ভধারিণী মায়ের সহযোগিতা। পুরুষের ক্ষেত্রে, পরবর্তিতে লাগে স্ত্রীর সহযোগিতা। নারী হলে মায়ের পরে, লাগে স্বামীর সহযোগিতা। পৃখিবীতে বা আমাদের দেশে সাধারণত নারীরা স্বামীর সহযোগিতা করেন, তাই পুরুষের রমরমা সফলতা। সেই ক্ষেত্রে পুরুষরা স্ত্রীর সহযোগিতা করেন না। ১. তারা চাননা তাদের দাসী, স্ত্রী তার থেকে ডকুমেন্টালি বড় হোক। ২. তার নিজের সেবার কমতি মোটেই যে তার কাম্য না, এটা কোন পুরুষেরই ৩. পুরুষ নারীর সেবার বলেই তো পুরুষ হয়। সমাজে মাথা উঁচু করে বড় হয়। বড় থাকে, ইত্যাদি। ১০০ ভাগ সত্যি পুরুষরা স্ত্রীর সহযোগিতা করেনা। যেটুকু ভালোবাসে, ভালো জানে, সেটা তাকে দাসি বানিয়ে রাখার কৌশল। তাই নারীদের রমরমা সফলতা নেই বা হয় না। আমরা যদি পিছনের কাল বা যুগের জরীপ সাধিত করি তাহলেই এটার প্রমাণ মিলবে। ধরতে পারবো পুরুষ এবং নারীর সফলতার প্রকৃততা আকাশ পাতাল পার্থক্য। উদাহরণ দিলে যেমন: নোবেল প্রাইজ হতে বাংলাদেশের বাংলা একাডেমী পরুষ্কার, একুশে ও স্বাধীনতা পদক, নারী পুরুষের প্রাপ্তি গণণায়ও সেটা উদ্ধার হবে। এখানে মেধার অংকও মা বাবার হতে প্রাপ্তি অংশের অংক ছেলের অর্ধেক মেয়ের প্রাপ্য হার মেনেছে! মা বাবার সম্পত্তির অংশ পুত্রের অর্ধেক কন্যা পাই। আমি কিন্তু পুত্র কন্যার আলাদা চোখে দেখি না। তাই যদি কখনও আমার নামের পদক গুণীজনদের দেওয়া হয় তবে আজকের নারী দিবসের লেখায় বলে রাখছি। সমানভাবেই যেন নারী পুরুষের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়। একজন নারী একজন পুরুষ বা দুইজন নারী দুইজন পুরুষ এইভাবে। তাহলে মেয়েরাও কর্মগুণে সমানভাবে এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। যা হোক আমি মনে করছি এই ‘একই সুতায় গাঁথা’— ৩প্রজন্মের ৩জন মহিয়সীই বাংলাদেশের যুগান্তকারী সূর্য নিশান এখনও পর্যন্ত আছেন। তাদের ’মানে বঙ্গবন্ধুসহ ২নারী কৃতি মানের বাংলাদেশ, বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোল্ড মডেলের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ আরো আরো উন্নয়ন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাক। ২০২৪ এর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এটাই হোক নারী পুরুষ নির্বিশেষে আশীর্বাণী ও প্রার্থনা।।
রচনা: 12/02/2014ইং, বেলা ২টা, সোমবার।

Related Articles

Back to top button