টাইমস ২৪ ডটনেট: জান্তাবিরোধী ৩ সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট থ্রি বাদারহুড অ্যালায়েন্সের কাছে আত্মসমর্পণের অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং এক জন কমান্ডারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সেখানকার সামরিক আদালত। সেনা বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। সম্প্রতি মিয়ানমারের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ শানের দখল নিয়েছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, মিয়ানমারের এই প্রদেশটির সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে চীন, লাওস এবং থাইল্যান্ড— তিন দেশের। এছাড়া দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ৫টি প্রদেশের সঙ্গেও সীমান্ত রয়েছে শানের।
শান প্রদেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম লাউক্কাই। থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স জোটের তিন গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) সঙ্গে প্রায় এক মাস ব্যাপক সংঘাতের পর গত জানুয়ারিতে নিজেদের অধীনে থাকা সৈন্যদলসহ আত্মসমর্পণ করেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং লাউক্কাই শহরের দায়িত্বে থাকা কমান্ডার। আত্মসমর্পণের পর সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিরাপদে লাউক্কাই ত্যাগে সহযোগিতা করেছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেনা বাহিনীর ওই সূত্রটি এএফপিকে আরও জানিয়েছে, আত্মসমর্পণে ভূমিকা রাখার জন্য আরও তিন জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে আজীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছেন সামরিক আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সাল পর্যন্ত শান প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সভুক্ত জোট এমএনডিএ’র। বর্তমান জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং ২০০৯ সালে এমএনডিএ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং সামরিক বাহিনীপন্থী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে প্রদেশটির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেন। সে সময় সেনাবাহিনীর একজন আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন মিন অং হ্লেইং।
জান্তাপন্থী ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী শানের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পর তিন দেশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা এই প্রদেশটিকে রীতিমতো মাদক, যৌন ব্যবসা এবং মানবপাচারের কেন্দ্রে পরিণত করে। এই তিনটি খাত ছিল ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অর্থ উপার্জনের প্রধান উৎস। এমএনডিএ’র নেতারা জানিয়েছেন, প্রদেশটির সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অব্যহতি দিয়ে পুরো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্র অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনতা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্রপন্থীদের একাংশ জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সভুক্ত তিন গোষ্ঠী পিডিএফ জোটেরও নেতৃস্থানীয় সদস্য।
সূত্র : এএফপি ও ঢাকা পোষ্ট।