জাতীয়

দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

টাইমস ২৪ ডটনেট: বাংলাদেশের বাজারে অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের জন্য দেশীয় পণ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং তার ওপর নির্ভরশীলতা তৈরির প্রতি জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব তো গ্লোবাল ভিলেজ, কেউ একা না। বিদেশে দাম বাড়ে, আমাদের ওপর চাপ বাড়ে। এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও তার ব্যবহার বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে তিনি পূর্বাচল মেলাস্থলে উপস্থিত হন এবং মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছি। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের মাধ্যমে আমাদের আবার ক্ষমতা বা সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ৯৬ সাল থেকে যখন সরকার গঠন করেছি, সেখান থেকে একটা প্রচেষ্টা, আর্থসামাজিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নত করা। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া।
দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হবে: ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার না ঘটলে কোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না, মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট একোয়া আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশের জনগণকে কেউ চ্যালেঞ্জ দিয়ে দাবায় রাখতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের কূটনীতি রাজনৈতিক নয়, এটি হবে অর্থনৈতিক কূটনীতি। বিদেশে আমাদের সব দূতাবাসকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, এখনকার ডিপ্লোমেসি এটা পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। অর্থাৎ প্রতিটি দূতাবাসকে ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, কী আমরা রপ্তানি করতে পারি বা কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে। পোশাকের পাশাপাশি পাট ও অন্যান্য পণ্যের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সেজন্য আমাদের আরও পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
ক্ষমতা হচ্ছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বড় সুযোগ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা বড় সুযোগ। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার একটা সুযোগ, যা আমি পেয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পরপর ৪বার আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে জনগণ। উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের এই সময়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছি, এজন্য আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আবার আমাদেরকে জয়ী করায়, তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যাতে মাথা উচু করে বিশ্ব দরবারে চলতে পারে, সেই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এখন কূটনীতি হবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক না; সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে বিদেশি মিশনগুলোকে। গভীর সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি স্থল বন্দরগুলোও চালু করা হয়েছে। এখন দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সহজে পণ্য পরিবহন সহজকারণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বাড়ানোতে কাজ করছে সরকার। পাট, চামড়াসহ রপ্তানি পণ্য নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। গার্মেন্টসকে যে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বাকি সব পণ্যেও সমসুযোগ দেওয়া হবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ২০২৬ সালে যাওয়ার যে সুযোগ আসবে, তা কাজে লাগাতে হবে। তাই আগামীর চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ মোকাবিলা করার জন্য সরকার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। উন্নয়নের স্বার্থেই প্রয়োজন ছিল সরকারে আসার। আমাদের প্রস্তুতি থাকলে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে না।
অন্যান্য রপ্তানি পণ্যকেও গুরুত্ব দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মত পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের আরও নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার (রপ্তানির জন্য) অন্বেষণে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা বর্তমানে রপ্তানির জন্য কয়েকটি পণ্যের উপর নির্ভর করি। রপ্তানির জন্য একটি বা দুটি পণ্যের উপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ অনেক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, নতুন নতুন বাজার আমাদের খুঁজে বের করতে হবে,একটা বা দু’টার উপর আমাদের নির্ভরশীল থাকলে চলবে না। কারণ অনেক চড়াই উতরাই পার হয়েই আমাদের আসতে হয় । সেটা মাথায় রাখতে হবে ।
নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে: শেখ হাসিনা বলেছেন, এবার যে নির্বাচন ইশতেহার দিয়েছি সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াবো ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম, কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোন অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই। সারা বাংলাদেশে তাঁর সরকারের ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং কোন অঞ্চলে কোন পণ্য ভালো হয় সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই খাতে রপ্তানি আয় ২০২২ – ২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ সামনে রয়ে গেছে। আইটি খাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ২৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছি। যদিও বিশ্ব মন্দার অভিঘাতে ইউরোপ আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্য চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে নতুন বাজার আমাদের খুঁজতে হবে, নতুন জায়গায় যেতে হবে। তার সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সাথে পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকার জাতীয় ‘ট্যারিফ পলিসি ২০২৩’ প্রণয়ন করছে। এটা আমাদের রপ্তানিতে আরো সুযোগ সুবিধা এনে দেবে।
হস্তশিল্প পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী: হস্তশিল্পজাত পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিবছর একটি পণ্যকে বর্ষপণ্য করে দেই। এবার হস্তশিল্পজাত পণ্যকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করছি। কারণ এটা নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করবে। নারীদের স্বাবলম্বী করতে হবে, সেজন্য এটি তাদের সহায়ক হবে। নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নারীরা যেসব পণ্য তৈরি করবে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে রফতানি বহুমুখীকরণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, পোশাকের পাশাপাশি পাট ও অন্যান্য পণ্যের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুব আলম।

 

 

Related Articles

Back to top button