বাংলাদেশ

রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

জুবায়ের আলম, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মানুষের শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি, জীবাণু ধ্বংসে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাসহ সকল ধরণের জীবাণুর এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় (১৮ ডিসেম্বর ২০২৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক ডেসিমেশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগে ২০২২ সালের জানুয়ারি হতে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সম্পন্ন রোগীর নমুনায় সকল ধরনের জীবাণুর এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহোদয় অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। চিকিৎসকদেরও রোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগীর প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক লিখতে হবে। এন্টিবায়োটিক বিষয়টি পরির্বতনশীল। তাই এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার সর্বশেষ অবস্থা চিকিৎসকের জানা থাকতে হবে। এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছো ব্যবহার সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার। উক্ত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায় রোগীদের নমুনায় জীবাণু সনাক্তকরণ ও জীবাণুসমূহের এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা নির্ণয়ের বিদ্যমান প্রযুক্তিসমূহ এবং এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় এই বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন। সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার ১লা জানুয়ারী ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ ফজলে রাব্বি চৌধুরী সংক্রামক ব্যধি চিকিৎসায় এ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জসমূহ বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, বেসিক সাইন্স ও প্যারা ক্লিনিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহসহ মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।
ডা. চন্দন কুমার রায় এর বক্তব্যের বিষয়বস্তু “Potential Role of Microbiology Laboratory in AMR Containing: BSMMU Perspective”. তিনি তার বক্তব্যে এ্যন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সক্ষমতা ও কার্যক্রম তুলে ধরেন। রোগীর নমুনায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, মাইক্রোব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উপস্থিতি নির্ণয় ও সাক্তকরণের বিভিন্ন ধরনের ল্যাবরেটরি পদ্ধতির বর্ণনা প্রদান করেন। মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরিতে পরিচালিত সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক ও সয়ংক্রিয় জীবানু সনাক্তকরন ও জীবানুর এ্যন্টিমাইক্রোরিয়াল রেজিস্ট্যান্ট নির্ণয়ের পদ্ধতিসমূহ তুলে ধরেন। সয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন ও বিরল প্রজাতির জীবাণু সনাক্তকরণ ও তাদের AMR Pattern নির্ণয়ে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবটরির বিশেষ অবদান তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরিতে Molecular Techniques ব্যবহারের মাধ্যমে যক্ষার জীবাণু Mycobacterium tuberculosis ও Non-tubercular mycobacterium সনাক্তকরনসহ উক্ত জীবাণুসমূহের Drug Resistance Pattern নির্ণয়ের পদ্ধতিসমূহ বর্ণনা করেন। এছাড়াও তিনি জীবানুসমূহের সংরক্ষণ পদ্ধতি, তথ্য সংরক্ষন ও রিপোর্টিং পদ্ধতি, AMR Surveillance – এ বিভাগের অবদান এবং AMR বিষয়ে বিভাগে পরিচালিত উল্লেখ্যযোগ্য প্রকাশনাপত্র উল্লেখ করেন। বক্তা তার বক্তব্যে বিভাগে AMR বিষয়ে পরিচালিত কর্মকান্ডের পাশাপাশি বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন|
ডা. শাহেদা আনোয়ার ১লা জানুয়ারী ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। মোট পরীক্ষাকৃত নমুনার সংখ্যা ৭২,৬৭০ এবং জানুয়ারি ২০২২ ২০২৩ সালরে জুন র্পযন্ত কালচারে পজটিভি ব্যক্টেরিয়ার সংখ্যা ছলি ১৫,৭৫১ (২১.৬৭%)।Escherichia coli এর পরে সবচেয়ে বেশি প্যাথোজেন ছিল Klebsiella pneumoniae, Pseudomonas aeruginosa, Acinetobacter baumannii, Enterococcus spp., Staphylococcus aureus. বর্তমান বছরে প্রাপ্ত Salmonella Typhi Salmonella paratyphi এর সামগ্রিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতার প্যাটার্নে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। Ceftriaxone এবং Cefixime দেশে টাইফয়েড ও প্যারটাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসার জন্য এখনো প্রথম ঔদল হিসেবে ব্যবহার হয়। Azithromycin ও পছন্দের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা তাব্যাহত রয়েছে। Escherichia coli এবং Klebsiella এর Imipenem সংবেদনশীলতা গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর কমে গেছে এবং Piperacillin-tazobactam এবং Colistin রয়ে গেছে কার্যকর ঔষধের তালিকায়, তবে, তুলনামূলক ভাবে Aminoglycosides এর সংবেদনশীলতা বেশি ছিল। ২০২২-২৩ সালে Pseudomonas spp. এবং Acinetobacter baumannii এর ক্ষেত্রে Carbapenam প্রতিরোধ যথাক্রমে ৭৫% এবং ৯৫% হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছিল। ইনফেকশন চিকিৎসার বিকল্প এনটিবায়োটিক সীমিত হয়ে আসছে। যদিও গত সদরের তুলনায় সমস্ত পরীক্ষিত অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতার প্রবণতায় কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। Methicillin Sensitive Staphylococcus aureus (MSSA) të Azithromycin, Ciprofloxacin এবং Co- trimoxazole এর প্রতি সংবেদনশীলতা স্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। আমাদের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে Methicillin Resistant Staphylococcus aureus (MRSA) হার কম ছিল, প্রায় ১৪.৫%। ভ্যানকোমাইসিন এবং লাইনজোলিডের মতো MRSA – প্রতিরোধী ওষুধের জন্য কোনও প্রতিরোধ পরিলক্ষিত হয়নি। আমাদের পর্যবেক্ষনে কোনো Vancomycin Resistent Enterococci (VRE) পাওয়া যায় নি। Colistin, প্রত্যাশিত হিসাসে, প্রায় ৯০% সামগ্রিক সংবেদনশীলতার সাথে সসায়ে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ছত্রাকজনিত রোগজীবাণুতে, অ্যান্টিফাঙ্গাল সংবেদনশীলতার দেখ। যায় C. tropicalis, C. albican গুলিতে ৯০% এর দেশি ফুকোনাজোলের সংবেদনশীলতা প্রকাশ করেছে, কিন্তু C. parapsilosis এবং C. galabrata তে সংবেদনশীলতার হার (৭৮১৯- ৮০%) হ্রাস পেয়েছে। Ceftazidime-avibactam এখন কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী জীবানুর জন্য একটি বিকন্ধ চিকিৎসা হিসাবে বিবেচিত হয় যদিও টি তাদের বিরুদ্ধে মাত্র ১১% সংবেদনশীল ছিল। Carbapenam Resistance (CR)-তে সেফিডেরোকলের সংবেদনশীলতার হার বেশি ছিল Klebsiella spp. (৯৭.৩%), CR-Acinetobacter spp. (৮৮.৯%), CR- Escherichia coli) এবং CR-Pseudomonas spp (৬৬.৬৬%)। ৮০% CR-Gram Negative Bacteria ছিল ফসফোম ইসিন সংশেফালীন। Mycobacterium tuberculosis & Non-tubercular mycobacterium সনাক্তকরণের হার এই বছরে ছিল ১৫.৬৩% এ ৬.৭%।
ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্সের উপর অতি সম্প্রতি দুইটি গবেষণাপত্র The Lancet জার্নালে প্রকাশের তথ্য প্রদান করেন। এই দুইটি গবেষণা প্রবন্ধেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী সরাসরি যুক্ত ছিলেন। উক্ত গবেষণা প্রবন্ধ মতে ২০১৯ সালে ব্যাকটেরিয়া জনিত AMR এ প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে কয়েকটি ব্যাকটেরিয়াকে ভবিষ্যতের আশংকার কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এগুলো হল- MDR TB, Quinolone এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী টাইফয়েট, ESBL producing E.coli এবং Klebsiella সংক্রমণ এবং Carbapenam প্রতিরোধী Enterococci সংক্রমণ। এছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিউমোনায়া জনিত অসুখ, সেপসিস এবং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী প্রসাব সংক্রমণে সঠিক এন্টিাবায়োটিক ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা পালন করা উচিৎ। এছাড়াও হাসপাতালজনিত সংক্রমণের হার বাংলাদেশে আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

Related Articles

Back to top button