সারাদেশ

দেশে দুই জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত

টাইমস ২৪ ডটনেট: চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ দুই জেলায় মঙ্গলবার সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বাস ও অটোর মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন শিশুসহ ৭ জন এবং ময়মনসিংহের শিকারিকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিলবোর্ডে বাসের ধাক্কায় ৫ জন নিহত হয়েছে। এই দুই জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চারিয়ার ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ৭ আরোহী নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ১০ জন।
দুর্ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানের দোকানি মোহাম্মদ লোকমান বলেন, বিকট শব্দের পর সড়কে গিয়ে দেখিয়ে মানুষের দেহের ছিন্নভিন্ন অংশ। অটোরিকশার সামনে চালক আটকে পড়েছিল। তাকে টেনে বের করে একটি গাড়িতে তুলে দিই হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। বাকি ৭ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। অটোরিকশাটি সঠিক লেনেই চলছিল। কিন্তু বাসটি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে ভুল লাইনে ঢুকে পড়ে এবং বিপরীত দিক থেকে আসা অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়, বলেন তিনি।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, একটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংষর্ঘে শিশুসহ সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১০ জন আহত হয়েছেন।
হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রশিদ জানান, নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী, একজন পুরুষ ও তিন শিশু রয়েছে। নিহতরা হলেন, বিপ্লব (২৭), বাপ্পা (৩২), রিতা (৪০), শ্রাবন্তী (১৮), বর্ষা (১০), দ্বীপ (৩) ও দিগন্ত (৩)। তারা সবাই চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ধোপা পাড়ার দুলাল মাস্টার বাড়ির বাসিন্দা।
হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন লিডার সাদেক হোসেন বলেন, চারিয়ার ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন জায়গায় বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে ৭ জন মারা গেছেন। খবর পেয়েছে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করি। এরআগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরবাইকের তিন আরোহী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কমলদহ এলাকায় ইউটার্ন নেওয়ার সময় মালবাহী একটি যানবাহনের পেছন থেকে মোটরবাইকটি ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন আকিব, জনি ও ইমাম। তাঁরা সবাই শিক্ষার্থী, বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর।
অপরদিকে ঢাকা থেকে শেরপুরগামী একটি বাস ময়মনসিংহের শিকারিকান্দা বাইপাস এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। সড়ক বিভাজকে উঠে ধাক্কা লাগে বিলবোর্ডের পিলারের সঙ্গে। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে ঘটনাস্থলেই ৪ জন নিহত হন। হাসপাতালে আরও ১ জন নিহত হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও শেরপুরের শ্রীবরদীতে দুই মোটরবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক চালকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার বকচর গ্রামের শ্রীবরদী-ভায়াডাঙ্গা রাস্তার উপর ঘটনা ঘটে। নিহত আল আমিন (৪৫) পাশ্ববর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের কাংশা গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে।
ময়মনসিংহ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন জিয়াউর রহমান। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার জহিরুল হকের ছেলে। জিয়াউর রহমান পেশায় একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। জিয়াউর রহমান বলেন, সোমবার রাতে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার বন্ধু হানিফের বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ফাইয়াজ অ্যান্ড তাজ পরিবহনের বাসে উঠি। ওঠার পর থেকেই বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। বাসটি চৌরাস্তা থেকে ছেড়ে শালনা এলাকায় আসতেই অপর একটি গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টে যেতে চায়। এসময় গাড়ির বেপরোয়া গতি দেখে অনেক যাত্রী চালককে বকাবকি ও মারধর করতে চান। তিনি বলেন, গাজীপুর সিড স্টোর এলাকার বাঘের বাজার এলাকার চার যাত্রী ছিলেন বাসে। ওই চারজন চালককে হুমকি দিয়ে বাঘের বাজার পর্যন্ত বাস ঠিক করে চালিয়ে যেতে বলেন। তা নাহলে বাস থেকে নেমে মারধর করার হুমকি দেন চালককে। পরে বাস বাঘের বাজার পর্যন্ত এলে তারা নেমে যান। এরপর ত্রিশাল থেকে আবারও বেপরোয়া গতিতে বাস চালাতে থাকেন চালক। তখনো যাত্রীরা চালককে সতর্ক করেন কিন্তু তিনি কোনো কথা শুনেনি। এসময় আমি বাসে ঘুমিয়ে পড়ি। জিয়াউর রহমান বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। তারপর শুধু চারদিকে কান্না আর ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। এসময় স্থানীয়রা দৌড়ে এসে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। চালকের বাস চালানোর ধরন দেখে মনে হয়েছে তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি এমন বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়েছেন যে, একজন সুস্থ চালক কখনোই এভাবে চালাতে পারে না, যোগ করেন বাসের এ যাত্রী।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

 

Related Articles

Back to top button