এস.এম.নাহিদ, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতো পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও এর আশেপাশের সার্জেন্ট, সাব-ইন্সপেক্টর ও থানার পরিদর্শকরা। অনেকটাই স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি। কিন্তু সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা বা সদস্যদের যথাসময়ে হচ্ছে না পদোন্নতি। এ নিয়ে প্রতিনিয়তই মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব ও বিরোধের সৃষ্টি হচ্ছে বিসিএস পুলিশ ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের মধ্যে। দীর্ঘদিনেও পদোন্নতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা। তাদের দাবি, সরকার পদোন্নতি জটিলতা নিরসনে পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপ-মহাপরিদর্শকদের (ডিআইজি) জন্য সুপার নিউমারি পদের ব্যবস্থা করছে, কিন্তু সেখানে সেই সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছেন ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) ও সাব-ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্টরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বর্তমানে প্রায় ১৫০০ সাব- ইন্সপেক্টর পিএল ভুক্ত থাকার পরও ইন্সপেক্টর হতে পারছে না। পাশাপাশি আরও ১৫০০ এর বেশি ইন্সপেক্টরশীপ পাশ করে ট্রেনিং করে বসে আছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ধরনের জটলা অতীতে পড়েনি। এখন অধিকাংশই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হইতে পড়াশোনা শেষ করে সাব- ইন্সপেক্টর এ চাকরি শুরু করে। কিন্তু তারা যথাসময়ে প্রমোশন পায় না।তাদের মনের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও সিনিয়রদের ভয়ে বলতে পারছে না। চাকরির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও ভাগ্যে মিলছে না পদোন্নতি। অনেকে যে পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, সেই পদেই অবসরে চলে যাচ্ছেন। এর ফলে পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের মধ্যে পারস্পরিক ক্ষোভ বাড়ছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাব ইন্সপেক্টরদের মত সার্জেন্টও একই গ্রেডের অফিসার। তাদের জন্য নতুন পোস্ট সৃজন না হওয়ায় পদন্নোতি জটিলতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। একই পেশায় ১৫-২০ বছর কাটাতে হচ্ছে এবং পদন্নোতি জটিলতার আর একটি কারন তাদের স্বাধীন কোন ইউনিট না থাকা। বছরে ৫০ জন করে সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর হয় তাতে করে এক ব্যাচে ৭০০ অফিসার থাকলে পদন্নোতি পেতে ১৪-২০ বছর লেগে যাবে। এতে করে তারা চরম বৈষম্যর স্বীকার হবে। পুলিশের সকল ইউনিটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে ট্রাফিকের ফোর্স। তারপরে সময় মতন তাদের পদন্নোতি না পাওয়া তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টির অন্যতম কারন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পরিদর্শক পদ জটিলতা নিরসনের জন্য সরকার চাইলে পদ সৃষ্টি করে পরিদর্শকদের জন্য পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে পারেন। আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে নতুন পদ সৃষ্টি করে অনেকটা পদোন্নতি নিরসন করেছি। এখনও সরকার চাইলে ক্যাডারদের মতো নন-ক্যাডারদের সুবিধা দিতে পারে। যেমন সুপার নিউমারিতেও অপেক্ষমাণ পরিদর্শকদের পদোন্নতির আওতায় আনতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি,বিএম ফরমান আলী ও সাধারণ সম্পাদক পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, সম্প্রতি আমরা আইজি স্যারকে জানিয়েছি, যেন আমাদের দিকটাও তারা দেখেন। পুলিশ ক্যাডার থেকে ১৫ বছরে তারা চারটি পদোন্নতি নিচ্ছেন। আমাদের চাকরির মেয়াদ ৩০ বছর।শুধুমাত্র এসআই পদেই ১৫ বছর পেরিয়ে যায়। এরপর পরিদর্শক পদ থেকে ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি পদোন্নতি হয় না। তিনি বলেন, সম্প্রতি পদ নিরসনের জন্য সুপার নিউমারির ব্যবস্থা করেছেন। আমাদেরও যেন কোটা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হয়। আমাদের বেলায় যেন পদ বৈষম্য না হয় এটাই অনুরোধ।
পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। সরকারি অন্য চাকরিজীবীরা এই গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেলে তাদের গ্রেড পরিবর্তন হয়ে ষষ্ঠ হয়, অথচ আমাদের এএসপি পদে পদোন্নতি হলে গ্রেডের কোনো পরিবর্তন হয় না।অনেক ইইন্সপেক্টরগন সেটাকে পৃথিবীর বিরল ঘঠনা বলে উল্লেখ করেন। কারণ এএসপিরাও নবম গ্রেডের কর্মকর্তা।সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা একই পদে ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় কর্মরত থাকলে তার গ্রেড পরিবর্তন হয়। পরিদর্শক, উপপরিদর্শকদের দাবি- সরকার পদোন্নতি জটিলতা নিরসনে পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপ-মহাপরিদর্শকদের (ডিআইজি) জন্য সুপার নিউমারি পদের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু সেখানে সেই সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) ও সাব-ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্টরা। সম্প্রতি এই পদ সৃষ্টি হয় ৫৫২ জন।পত্রপত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ৫২ জনকে উচ্চ পর্যায়ে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। বাকি যে ৫০০ পদ রয়েছে সেখান থেকে পরিদর্শকদের কোটা অনুযায়ী পদন্নোতি দিলেই সবাই সন্তুষ্ট।