অর্থনীতি

ডলার সিন্ডিকেট শনাক্তে কঠোর নজরদারি

টাইমস ২৪ ডটনেট: ডলার সিন্ডিকেটে জড়িতদের শনাক্তে মাঠপর্যায়ে তদন্ত করছে সরকারি খাতের তিনটি সংস্থা। এগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)।কারা বেশি দামে ডলার কিনছেন, কেন কিনছেন, কোথায় মজুত করছেন, কিভাবে এগুলো বিক্রি করছেন-এসব তথ্য সংগ্রহ করছে সংস্থাগুলো। এভাবে ডলার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এর আওতায় ব্যাংক, মানি চেঞ্জার্স বা কোনো ব্যক্তির সম্ভাব্য ঠিকানায়ও অভিযান পরিচালনা করবে সংস্থাগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তদন্ত করছে। মানি চেঞ্জার্স ও কার্ব মার্কেটে তদন্ত করছে এনএসআই। তাদের সহায়তা করছে বিএফআইইউর কর্মকর্তারা। তিন পক্ষই ডলার নিয়ে কারসাজি ও মজুতকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে বেশি দামে কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছে। সেসব ডলার আবার বেশি দামে বিক্রি করেছে। ওই সময়ে রেমিট্যান্সের প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা করে কেনার কথা।কিন্তু কিছু ব্যাংক কিনেছে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকা করে। প্রতি ডলারে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দিয়েছে। ফলে বিদেশি বহুজাতিক এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো বেশি দাম যে ব্যাংকে পেয়েছে ওই ব্যাংকে ডলার দিয়েছে। এতে করে ছোট ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। কমেছে বড় ব্যাংকগুলোর। কারণ ছোট ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনেছে।বেশি দামে কেনা ডলার ওইসব ব্যাংক বিক্রি করেছে ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা করে। প্রতি ডলারে তারা ৩ টাকা মুনাফা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে এক টাকার বেশি ব্যবধান হওয়ার সুযোগ নেই। অর্থাৎ প্রতি ডলারে এক টাকা মুনাফা করা যাবে।
এছাড়া প্রতিদিনকার ডলার কেনাবেচার দর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে হবে। ব্যাংকগুলো বাড়তি দরে ডলার কেনার তথ্য না জানিয়ে নির্ধারিত দরের কেনার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি করার দায়ে সংশ্লিস্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রকট ডলার সংকটের কথা বাইরে জানাজানি হলে মানি চেঞ্জার্সগুলোও ডলারের দাম বাড়িয়ে দেয়। তাদের প্রতি ডলার বিক্রি করার কথা সর্বোচ্চ ১১২ টাকায়। কিন্তু তারা অফিশিয়ালি ডলার না কিনে খোলা বাজারের হিসাবে ডলার কেনাবেচা শুরু করে।
প্রতি ডলার কিনেছে ১১৬ টাকা করে বিক্রি করেছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা করে। এতে করে নগদ ডলারের একটি বড় অংশই খোলা বাজারে চলে যেতে থাকে। ব্যাংকে ডলারের প্রবাহ কমে যায়। এ অবস্থায় মানি চেঞ্জার্স ও কার্ব মার্কেটে তদন্ত শুরু করেছে এনএসআই। এতে সহায়তা করে বিএফআইইউ।
তারা অনেক মানি চেঞ্জার্সেই অনিয়ম পেয়েছেন। নগদ ডলার মজুত করার দায়ে ৮টি মানি চেঞ্জার্সকে সিলগালা করেছে। তাদের কাছ থেকে ২ কোটি নগদ ডলার জব্দ করেছে। খোলা বাজার ও মানি চেঞ্জার্স থেকে যারা ডলার কিনেছে তাদের তালিকা সংগ্রহ করছে।ইতোমধ্যে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে, কার্ব মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে নগদ ডলারের জোগান দেওয়ার জন্য কয়েকজন আমদানিকারক আগে থেকেই বলে রেখেছিলেন। সে অনুযায়ী কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ডলারের জোগান দিয়েছেন। ওইসব ডলার দিয়ে আমদানিকরকরা বিলাসী পণ্য আমদানির এলসি খুলেছেন। কারণ বিলাসী পণ্য আমদানির এলসি খুলতে ব্যাংক ডলার দিচ্ছে না। এভাবে কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনে তা দিয়ে এলসি খোলা বেআইনি। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।এছাড়া কিছু ব্যক্তি কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনে মজুত করেছেন। সেগুলোর ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল যে, বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসার পর যাদের কাছে ১০ হাজার ডলারের বেশি আছে সেগুলো ব্যাংক বা মানি চেঞ্জার্সের কাছে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এতে তেমন সাড়া মেলেনি।
এদিকে নগদ ডলার থাকলেও অনেকেই ফেরার সময় কাস্টমস ফরমে ঘোষণা দিচ্ছেন না। অথচ নিয়ম রয়েছে ঘোষণা দেওয়ার। এসব কারণে ডলার মজুত সম্পর্কেও কোনো তথ্য নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।

Related Articles

Back to top button