টাইমস ২৪ ডটনেট: ৭১ ও ৭৫ এর খুনীদের সঙ্গী বিএনপির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রবিবার জাসদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন।তিনি আরো বলেন ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি, বিয়োগান্তক ঘটনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবেই হত্যা করেনি, খুনীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মাকেই হত্যা করে পাকিস্তানী আত্মাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দেহে প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ নেতা খন্দকার মোস্তাকের পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান তার কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছেন তিনিই খুনীদের রক্ষক, পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়দাতা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করা, সংবিধান থেকে চার মূলনীতি মুছে ফেলে ইতিহাসের ভাগাড় থেকে কুখ্যাত দ্বি-জাতিতত্ত্ব, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তুলে এনে রাষ্ট্র ও সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়েছিল জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, খুনীরা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নামনিশানা মুছে দিতে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানপন্থী রাজাকার-আলবদরদের সমাজে-রাষ্ট্রে-রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পথে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুনী মোস্তাক-জিয়ার পাকিস্তানপন্থার এই রাজনীতি এখনো বিএনপি বহন করে চলেছে। বিএনপি জামাতের হাত ধরেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু পাকিস্তানপন্থীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ভিত্তিতে আঘাত করে চলেছে। তিনি বলেন, জেনারেল জিয়ার উত্তরসূরি খালেদা জিয়াও সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ-বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবেই আবির্ভূত। বেগম খালেদা জিয়া তার স্বীমর মতই গণতন্ত্রের নামে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সংসদে নিয়ে আসে, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তার মন্ত্রীসভায় ঠাই দেয়। তিনি বলেন, নির্বাচনকে উছিলা হিসাবে ব্যবহার করে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী-জামাত-সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে অসাংবিধানিক-অস্বাভাবিক ভূতের সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এক দফার নামে দেশে আগুনসন্ত্রাস-বিশৃংখলা সৃষ্টি করে যথাসময়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাই এইমুহুর্তে আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক কর্তব্য হচ্ছে ৭১ ও ৭৫ এর খুনীদের সঙ্গী বিএনপির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন নিশ্চিত করা।
ঢাকা মহানগর জাসদের সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতারের সভাপতিত্বে এবং জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ শহীদুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান, মোহাম্মদ মোহসীন, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মোঃ নুরুন্নবী, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সাধারণ সম্পাদক এড. মুহিবুর রহমান মিহির, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমূখ।
শিরীন আখতার এমপি তার ভাষণে বলেন, ১৫ আগস্ট শোকের মাস বাঙালি জাতির জীবনের অন্ধকারময় রাত। এ দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর সহধর্মীনী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন পুত্র জামাল-কামাল-রাসেল, আত্মীয়-স্বজনসহ আঠারো জনকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে একটি রাজনীতি ছিলো। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সময় আমরা তা দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুকসহ সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি রাজনীতির মাঠে বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় স্বমহিমায় আবির্ভূত হয়। তিনি বলেন, আজও বাংলাদেশ একটি যুদ্ধের মধ্যে আছে। এ যুদ্ধ থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতীক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চিরশত্রুদের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় দিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আলোচনা সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি পুস্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাসদের সহযোগী সংগঠনসমূহ।