বাংলাদেশসারাদেশ

র‌্যাবের জালে ‘আরসা’র শীর্ষ কমান্ডার নুর মোহাম্মদসহ ৬ জঙ্গি

এনামুল হক, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: মায়ানমারে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিল আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা। স্বদেশীয় আরসাদের অমানবিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ সাধারণ রোহিঙ্গারা। খুন-ডাকাতি-তোলাবাজি থেকে শুরু করে শিবিরের তরুণী-যুবতীদের জোর করে ধরে নিয়ে হোটেল-মোটেলে দেহব্যবসার পাশাপাশি বিদেশেও পাচার করে দেওয়া হতো। র‌্যাব-পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা এলে পালিয়ে পাশের পাহাড়ে গা ঢাকা দিত। এবার দেশের এলিটবাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার জেলার টেকনাফের গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গার সশস্ত্র সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ কমান্ডার নুর মোহাম্মদকে আটক করেছে। এ অভিযানকালে একই সংগঠনের আরো পাঁচ জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। আটক নূর মোহাম্মদ উখিয়া ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি/১৭ ব্লকের মৃত দিল মোহাম্মদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। শুক্রবার বিকেল ও রাতের অভিযানে নূর মোহাম্মদসহ অন্যদের আটক করা হয়।র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আরসা গ্রুপ কক্সবাজার ও এর আশপাশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিতভাবে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও তোলাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, র‌্যাবের একটি দল গতকাল শুক্রবার রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ আরসার শীর্ষ কমান্ডার হাফিজ নুর মোহাম্মদকে (২৮) আটক করে। আজ শনিবার কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হাফিজ নূরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শামলাপুর ও বাহারছড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ৫ আরসা সদস্যকে আটক করা হয়। ক্যাম্প ১৫-এর হোসেন জোহর (৩০) ও মো. ফারুক (২৩), এবং ক্যাম্প ১৬ এর মনির আহমেদ (৩৬), নুর ইসলাম (২৯) ও মো. ইয়াসিন (২১) সবাই আরসার শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং সক্রিয় সদস্য। দিন দশেক আগেই রোহিঙ্গাক্যাম্পে পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে আরসা কমান্ডার হুসেন মাঝি নিহত হয়।
নানা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গুলিযুদ্ধে অন্তত ৫৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নেতা বা মাঝি, আরসা সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ রোহিঙ্গাও রয়েছেন।
র‌্যাবের মিডিয়া পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, আরসার শীর্ষ কমান্ডার হাফিজ নূর ৩০-৩৫ সদস্যের একটি অপরাধী চক্রের নেতৃত্ব দিত। তারা কুতুপালং ক্যাম্প ও এর আশেপাশের এলাকায় নিয়মিত হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে। তারা প্রতিবেশী দেশ থেকে দুর্গম সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্র পাচার করে এবং সেই অস্ত্র দিয়ে অপরাধ করতো এবং স্থানীয় অপরাধী গোষ্ঠীকেও অস্ত্র সরবরাহ করতো। স্থানীয়দের ভয় দেখিয়ে হত্যা ও অপহরণের হুমকি দিয়ে তারা চাঁদাবাজি করত। দাবি পূরণ না হলে তারা স্থানীয়দের অপহরণ করে এমনকি তাদের হত্যা করে গভীর পাহাড়ি এলাকায় লাশ লুকিয়ে রাখতো। মাদক চোরাকারবারিদের কাছ থেকে তারা টোলও আদায় করে এবং অপরাধ করার পর তারা গভীর বন ও পাহাড়ে আত্মগোপন করে, বলেন তিনি।র‌্যাব জানায়, হাফিজ নুর একজন তায়কোয়ান্দো ব্ল্যাক বেল্টধারী। তিনি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ তৈরিতে বিশেষজ্ঞ। ২০১৬ সালে সেকশন কমান্ডার হিসেবে আরসাতে যোগ দেন এবং আরসা সামরিক শাখার প্রধান ওস্তাদ খালেদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক এবং নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আসেন হাফিজ নূর। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ক্যাম্প ৮ এর প্রধান কমিউনিটি নেতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ধীরে ধীরে কুতুপালং ক্যাম্পে আরসা-এর শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের একজন হয়ে ওঠেন।
র‌্যাব-১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, শুক্রবার বিকেলে নূর মোহাম্মদকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কক্সবাজারের শামলাপুর-বাহারছড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে বিপুল দেশি-বিদেশি অস্ত্র ছাড়াও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

Related Articles

Back to top button