টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশে সংবিধান মেনে সঠিক সময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের জন্য কাজ করেছি। জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। বুধবার দুপুরে গণভবনে সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর শেষে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পশ্চিমা গণতন্ত্র ফলো করি। ব্রিটেনে কীভাবে নির্বাচন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবে করব। আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, সংসদে যেসব সংসদ সদস্য আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে নির্বাচনকালীন তারা সরকারে আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি। এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমি এ আহ্বান করেছিলাম, তিনি আসেননি।
বিএনপি মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন আমাদের নামতে দিয়েছে? হামলা করেছে, ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার লোক ও ৩৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে। ২৭টি রেল পুড়িয়েছে। ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। আন্দোলন করুক তারা কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি জ্বালাও-পোড়াও কিছু করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার পোড়ায়, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না।
সংবিধান মেনেই জাতীয় নির্বাচন হবে: সংবিধান মেনেই সঠিক সময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় যাবে। তিনি বলেন, দেশে কোনো অস্বস্তিকর পরিবেশ নেই। এককভাবে কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না দেশ, সব বিষয় বিবেচনা করেই ব্রিকসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত কী বলবে তা নিয়ে বাংলাদেশের ওকালতি করতে হবে না। তিনি বলেন, যারা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না, তারাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক ধারা নষ্ট করতেই ষড়যন্ত্রে মেতেছে একটি মহল। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না আওয়ামী লীগ। দেশে নির্বাচন নিয়ে কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নেই। সঠিক সময়েই সংবিধান মেনে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে।
সেন্টমার্টিন বিক্রি করে ক্ষমতা চাই না: সেন্টমার্টিন বিক্রি করে ক্ষমতা চান না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কি এবার দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমার্টিন বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? এটা তাকে দিয়ে হবে না। এ ছাড়া কাউকে দেশ বিক্রি করতে দেবেন না বলেও জানান তিনি। বাজার নিয়ন্ত্রণে কালোবাজারি ও মজুতদারির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক থাকে সুযোগসন্ধানী। যারা মজুতদারি, কালোবাজারি করে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুঁজে খুঁজে বের করা হবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছি: সুইজারল্যান্ড সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ার উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ধরে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। সুইজারল্যান্ড সফরে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি। সুইস রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংকট নিরসনে সুইজারল্যান্ডসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সুইজারল্যান্ডে ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে ব্রিকস জোটে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার আগ্রহের কথা জানাই। আগামী আগস্টে জোহানেসবার্গে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনার কথা জানান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, কাতার সফরে গুরুত্ব পায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি। এ ছাড়া ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ পরবর্তী সময়ে কর্মহীন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন কাতারের আমির। চলতি বছর বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও ইতিবাচক সাড়া দেন তিনি। কাতারে সাম্প্রতিক দুটি সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
নারীরা ঘরও সামলান, চাকরিও করেন: নারীরা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে এবং তারা পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ৪৫ শতাংশের বেশি নারী কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রামের নারীরাও বিভিন্ন কাজে সময় দিচ্ছেন। নারীরা সংসারেও শ্রম দিচ্ছেন। এটাকে গণ্য করলে নারীরা পিছিয়ে নেই। এতে দেখা যায় নারীরা বেশি কাজ করেন। ঘরও সামলান, চাকরিও করেন। বিভিন্ন কাজও করে যাচ্ছেন। যেক্ষেত্রে পুরুষরা কিন্তু পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এখন নারীদের সংখ্যা বেশি। এক্ষেত্রে আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছি এতে নারীরা এগিয়ে গেছেন। তারা ভালো রেজাল্ট করছেন, বিভিন্ন বৃত্তির ক্ষেত্রেও তারা বেশি পাচ্ছে। আশ্রয়ণের ঘর নারীদের নামে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ নিয়ে আসতে পারেন। এ অবস্থায় নারীদের আশ্রয় নিশ্চিত করতে তাদের নামে ঘর দেয়া হয়েছে। কেউ নতুন বিয়ে করতে চাইলে নতুন বউয়ের ঘরে গিয়ে উঠবেন, এসব ভেবেই ঘর নারীর নামে দেয়া হয়েছে। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নারীদের ব্যবাসার মূলধনসহ অর্থনিতক সহায়তার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে বিশেষ সুবিধা শুধু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য দেয়া হয়েছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলেও নারীদের জন্য প্লট নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কাজেই নারীে উদ্যোক্তারা এ বিশেষ সুবিধা নিতে পারেন।
এরআগে দুপুর ১২টার পর শুরু হওয়া সোয়া এক ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন সফরের নানা অর্জন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু, জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছে দুই সফরে। তবে বরাবরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে সাম্প্রতিক নানা ইস্যু। তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, এটা তো আমাদেরই দাবি। অনেক আন্দোলনের মধ্যে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা মানুষের ভোটের জন্য সংগ্রাম করেছি; অথচ আমাদেরই ভোটচোর বলে, কিন্তু ওরা তো ভোট ডাকাত। দেশকে নিয়ে কেউ খেলবে, এটা আমি হতে দেব না। বিএনপি কি এবার দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমান্টিন বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? এটা আমার দ্বারা হবে না। কাউকে দেশ বিক্রি করতে দেব না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। কারো কাছে এ দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। এখন যদি বলি সেন্টমার্টিন দ্বীপ কারো কাছে বিক্রি করব কিংবা লিজ দেব, তাহলে ক্ষমতায় থাকায় কোনো অসুবিধা নেই। আমার দ্বারা এটা হবে না।
বিশ্ববাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা ইউক্রেন যুদ্ধ। যেসব জিনিস বাইরে থেকে আনতে হয়, সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে। তারপরও মানুষের কষ্ট যাতে না হয়, যেদিকে নজর রাখছি। বিদ্যুৎ সমস্যাও ধীরে ধীরে কেটে যাবে। কাতারের কাছ থেকে যেভাবে চেয়েছি, সেভাবেই এলএনজি আমদানির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়েস্টমিনস্টার মডেলেই নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিএনপিই নষ্ট করেছে। এখন তারাই সেটা ফেরত চাচ্ছে। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সব জানার পরও সাংবিধানিক ধারা নিয়ে জটিলতা তৈরির উদ্দেশ্যটা কী? গণতান্ত্রিক ধারা বিনষ্ট করতেই এটা করা হচ্ছে। এটা দেশের মানুষকেই বিবেচনা করতে হবে, তারা কী চান?
বিএনপিসহ মাঠে নামা কিছু দলের সমস্যা কী জানতে চেয়ে তিনি বলেন, জনগণকেই বেছে নিতে হবে তারা গণতান্ত্রিক ধারা চায়, নাকি আবার সন্ত্রাস যুগে, ভোট ডাকাতির যুগে ফিরে যাবে? ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে নানা অপ্রপ্রচার চালানো হচ্ছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, তত বেশি এ ধরনের প্রচারণা চালাবে। দেশবাসীকে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত ও কান না দেয়ার আহ্বান।