অর্থনীতি

বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১৯৯১ কোটি টাকা

মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দেওয়ার নির্দেশ

টাইমস ২৪ ডটনেট: আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা এবং এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্র্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) হবে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বুধবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে খসড়া বাজেটের ‘সারসংক্ষেপ’-এর অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং গরিব মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। প্রতিবছর জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণার আগে প্রস্তাবিত বাজেটের রূপরেখা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এ ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে তা উপস্থাপন করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন দিয়েছেন। তবে বাজেটের আয় ও ব্যয় এবং ঘাটতির অঙ্ক বাজেট ঘোষণার আগেও কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। সূত্রমতে, গণভবনে বাজেটসংক্রান্ত বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে শুরুতে অর্থসচিব ফাতেমা ইয়াসমিন আগামী অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা তুলে ধরেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগ-অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাজেটসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পুরো বাজেটের সারসংক্ষেপ উত্থাপন করার পর প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃচ্ছ সাধনসহ মোটাদাগে বেশি কিছু নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। এসব নির্দেশনার আলোকে অর্থ বিভাগ কাজ শুরু করেছে। সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণয়নের কথা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। তবে প্রধানমন্ত্রী আগামী দিনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন হার বাড়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা, হুন্ডি প্রতিরোধ করে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ানো এবং গ্রামীণ উন্নয়নে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা বলেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদনের প্রতি আরও জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে কোনো খালি জায়গা যেন পরিত্যক্ত না থাকে, সেটি খেয়াল রাখতে বলেছেন। সূত্র আরও জানায়, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে। এই কর্মসূচির আওতায় আগামী অর্থবছরে আরও বাড়ানোর জন্য বলেছেন। যাতে অধিক সংখ্যক মানুষকে অন্তুর্ভুক্ত করা যায়। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নতুন করে আরও সাত লাখ সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়বে। সূত্র আরও জানায়, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো আছে-এমনটি প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নিজেও আগামী বাজেট ভালো হবে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। এদিকে নতুন বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হচ্ছে মূল্যস্ফীতিকে। কারণ, আগামী দিনগুলোয়ও মূল্যস্ফীতি বহাল থাকবে-এমনটি ধরে নেওয়া হয়েছে। ওই হিসাবে আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সেখানে মূল্যস্ফীতি সহনীয় আনতে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও একটি টুলস হচ্ছে ঋণের সুদহার বাড়ানো। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে বলে অবহিত করা হয়। এছাড়া ঋণের সুদ, ভর্তুকি ও সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ছে, তা তুলে ধরা হয়। সার্বিকভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের সুদব্যয়ে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর ভর্তুকিতে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া ভর্তুকি ৪০ হাজার কোটি টাকা জের রয়েছে। বিপুল ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ব্যয়ের প্রবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সেখানে দেখানো হয় জিডিপির অনুপাতে মোট ব্যয় চলতি অর্থবছরের মতো একই থাকছে আগামী দিনে।
সূত্র: যুগান্তর অনলাইন।

Related Articles

Back to top button