আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কুয়েতি নন, কিংবা নাগরিকত্ব নেই-এমন ব্যক্তিদের সুপারমার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ কুয়েত। রমজান মাসের শুরু থেকে দেশটির বিভিন্ন সুপারমার্কেটে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। কোনো লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে এই আদেশ দেওয়া হয়নি। কুয়েতের দৈনিক পত্রিকা কুয়েত টাইমস এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু কোনো কর্মকর্তা এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি। শেষে মন্ত্রণালয়ের সুপারমার্কেট প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুয়েত টাইমসকে বলেন, ‘যারা কুয়েতের নাগরিক কিংবা নাগরিক না হয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত— তারা ব্যতীত সুপার মার্কেটে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।’ ‘মার্কেটে প্রবেশে ইচ্ছুকদের অবশ্যই প্রবেশের আগে নিরাপত্তাকর্মীদেরকে রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রের কপি বা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত) যে দপ্তরে কাজ করছেন— সেটির আইডি প্রদর্শন করতে হবে। পুরো রমজান মাস এই আদেশ কার্যকর থাকবে।’ঠিক কী কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো— সে সম্পর্কে কিছু বলেননি ওই কর্মকর্তা। তবে কুয়েতের বেশ কয়েকটি সুপারশপের কর্মীরা ‘অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে’ সরকারের এই নির্দেশ পালন করছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সংবাদামাধ্যম। ধারণা করা হচ্ছে, রমজান মাসে সুপারশপগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
এদিকে, কুয়েতের ভোক্তা সুরক্ষা সংস্থার প্রধান মেশাল আল-মানে কুয়েতের সরকারের এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। কুয়েতি টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সুপারশপগুলোতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের। রমজান মাসে ভিড় সামলানোর জন্য সরকার তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিতে পারত। তা না করে বিদেশি নাগরিকদের সুপারশপে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যৌক্তিক কোনো পদক্ষেপ নয়। এর কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই।’
‘সুপারমার্কেটে একজন ভোক্তার পরিচয়— সে ভোক্তা। সে কুয়েতি না বিদেশি নাগরিক— এক্ষেত্রে তা মুখ্য নয়। বিদেশে একজন কুয়েতির সঙ্গে যদি এমন আচরণ করা হতো, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হতো? আমরা কি তা স্বাগত জানাতাম? আমরা বলতে চাইছি— এটা মানবতাবিরোধী একটি সিদ্ধান্ত।’ তিনি জানান, ভোক্তা সুরক্ষা সংস্থার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কুয়েতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারিকে বিদেশি নাগরিকদের ভোগান্তির ব্যাপারে জানানো হয়েছে এবং তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
নাদা মাজেদ নামের এক প্রবাসী কুয়েত টাইমসকে বলেন, ‘রমজান শুরু হওয়ার তিন দিন আগে থেকেই অনেক সুপার মার্কেট কড়াকড়ি শুরু করেছে। যারা কুয়েতি নন, তাদেরকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না নিরাপত্তারক্ষীরা।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, কুয়েত একটি মানবিক দেশ। এখানকার মানুষের আচার আচরণ শান্ত। আমরা আশা করছি— কুয়েতের সরকার শিগগিরই এই সিদ্ধান্ত বাতিল করবে,’ কুয়েতি টাইমসকে বলেন নাদা মাজেদ।