আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানে অসন্তুষ্ট হয়েছে রাশিয়া। উত্তর ইউরোপের এই দেশটিতে যদি ন্যাটো সেনা সমাবেশ ঘটায় তাহলে ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে মস্কো।রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এটা (ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্যপদ প্রাপ্তি) আমাদের নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের ওপর একটি আঘাত। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে।’পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেন, ‘যদি ফিনল্যান্ডে ন্যাটো সামরিক ঘাঁটি করে এবং সেটি রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, সেক্ষেত্রে মস্কো উপযুক্ত জবাব দেবে।’
ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্ত আছে। ফলে এই দেশটি ন্যাটোর পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ায় রাশিয়ার দিকে আরো বেশ কয়েক কদম এগোলো এই সামরিক জোট।মঙ্গলবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের জোটের সদস্যপদ সম্পর্কিত দলিল ও নথি বিনিময় করেন। তারপর সংক্ষিপ্ত এক ব্রিফিংয়ে ন্যাটোর মহাসচিব জিনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমরা এই জোটের নতুন সদস্য ফিনল্যান্ডকে স্বাগত জানাচ্ছি।’এর আগে কোনো এক ব্রিফিংয়ে স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর বিস্তার থামাতেই রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে সামারিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে সেই বক্তব্য স্মরণ করে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘যে ভীতির কারণে তিনি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেটি বাস্তবে রূপ নেওয়া শুরু করেছে। ফিনল্যান্ড ইতোমধ্যে জোটের পূর্ণ সদস্য হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে সুইডেনও এই সদস্যপদ পাবে বলে আমরা আশা করছি।’সংবাদ সম্মেলনে জিনস স্টলটেনবার্গের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউল নিনিস্তো। তিনি বলেন, ‘ফিনল্যান্ডের জন্য আজকের দিনটি মহান একটি দিন এবং আমি বলতে চাই— ন্যাটোর জন্যও এটি একটি গুরত্বপূর্ণ দিন।’ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য গত কয়েক বছর ধরে তদবির করতে থাকা ইউক্রেনও শুভেচ্ছা জানিয়েছে ফিনল্যান্ডকে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দপ্তারের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রিয়ে ইয়েরমাক এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘ফিনল্যান্ড সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লক্ষ্য ন্যাটোর সদস্যপদ প্রাপ্তি ইউক্রেনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।’দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের প্রায় ৪ বছর পর, ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী ১১টি দেশ নিয়ে গঠিত হয় সামরিক জোট ন্যাটো। জোটের সংবিধানে যদিও লেখা আছে— কোনও সদস্যরাষ্ট্র হামলার শিকার হলে অন্যান্য সদস্যরা আক্রান্ত সেই রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াবে; কিন্তু এই জোটের লক্ষ্য মূলত ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে তৎকালীণ সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ঠেকানো।যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে জবাব দিতে নিজেদের মিত্রদের নিয়ে ওয়ারশ প্যাক্ট নামের পাল্টা একটি সামরিক জোট গঠন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সেই জোটও বিলুপ্ত হয়ে যায়।কিন্তু একই ঘটনা শাপে বর হয়ে ওঠে ন্যাটোর জন্য। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর এই জোটের ব্যাপ্তি আরও বাড়ে। বর্তমানে ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ৩১।