জাতীয়

স্মরণকালের ভয়াবহ আগুন বঙ্গবাজারে

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: ভোরের আলো ফুটবে, আর কয়েক ঘন্টা পর বঙ্গবাজারে কর্মস্থলে যাবে যে যার মতো। ঠিক তখনি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়লো পুরো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজারে। শুধু দোকান নয় পুড়তে শুরু করলো পাঁচ হাজার মানুষের স্বপ্ন। টানা ছয় ঘন্টার আগুনে স্বর্বশান্ত হলে পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী। স্মরণকালের ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজারে প্রায় ৫ হাজার দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। বঙ্গবাজারসহ আশপাশের ৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। এর আগে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৫০টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগ দেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, সেনা বাহিনী ও নৌ-বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও আগুন নিভাতে ও আইনশৃঙ্খলায় কাজ করেছেন পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ৬টা ১২ মিনিটে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সর্বশেষ ৫০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনা ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল, নৌবাহিনীর সম্মিলিত দল ও একটি হেলিকপ্টার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
সূত্র জানায়, ঈদের আগে কেউ জমি জমা আবার কেউ অর্থলগ্মি-ধার দেনা করে দোকানে মাল তুলেছেন। আশা ছিল এবারের ঈদে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। সেই আশা শেষ হয়ে গেছে। রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা আগুনে ব্যবসায়ীদের সকল স্বপ্ন ভেঙ্গেচুরে খান খান করে দিয়েছে। ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে উল্টো চোখের জলে ভাসছে ব্যবসায়ীদের। বঙ্গবাজারের আগুনে নি:স্ব করেছে প্রায় ৫ হাজার ব্যাবসায়ীর আশা-আঙ্খা ও স্বপ্ন। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা জীবন বাজি রেখে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। আগুনের কারণে ধোঁয়া মিলেমিশে অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে যায় বঙ্গবাজার ও গুলিস্তানের আকাশে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায় আগুন লাগার পর থেকে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের ভিড় বাড়ে। সঙ্গে বাড়ছে ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ আর আহাজারি। একদিকে ধোঁয়া, আরেকদিকে মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বঙ্গবাজার এলাকার পরিবেশ।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পান তারা। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনা বাহিনী ও বিমানবাহিনীর দুটি দল প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এরই মধ্যে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়। পাশের এনেক্সকো টাওয়ার এবং আরও কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় আগুনে। তিনি আরও জানান, বঙ্গবাজারের পাশেই ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর বলে খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে সেখানে প্রথম ইউনিট পৌঁছায়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ইউনিটের সংখ্যা। কিন্তু বাতাসের মধ্যে ঘিঞ্জি ওই মার্কেটের আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ওই অবস্থায় ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের অধিকাংশ ইউনিটকে সেখানে ডাকা হয়। বহু দূর থেকেও বঙ্গবাজারের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকেও আগুনের ওপর পানি ছিটানো হয়। বড় এলাকায় টিন ও কাঠ দিয়ে নির্মিত শত শত দোকান নিয়ে এই বঙ্গবাজার। ঈদ সামনে রেখে সব দোকানেই প্রচুর নতুন পণ্য তোলা হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত ওই এলাকার আদর্শ মার্কেট থেকে। পরে দ্রুতগতিতে পাশের মার্কেটগুলোর চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে ৯৯৯ থেকে তাদের কাছে কল যায়। তাদের জানানো হয় বঙ্গবাজারে আদর্শ মার্কেটে আগুন লেগেছে। পরে কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র আরও জানায়, প্রথমে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছালে মার্কেটে প্রবেশ করতে বাধা ছিল। মার্কেটের চারদিকে যে তালাগুলো লাগানো ছিল সেগুলো ভাঙতে অসুবিধা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। কারণ, তালাগুলো ভেতরে ছিল। আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যসহ মোট ১২ জন আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
ব্যবসায়ী আল-আমীন জানান, তিনি প্রায় ২৪ বছর ধরে আনন্দবাজারে আছেন। এরকম আগুন আগে কখনও দেখিনি। ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে রায় বঙ্গবাজার। পরে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার চারটি ইউনিটে বিভক্ত। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট মিলিয়ে মোট দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০টি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সেখানে আগুন লেগে মার্কেটের গুলিস্তান ইউনিটের কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়।
অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী হোসাইন বলেন, ‘৬টা বাজে যখন আগুন লাগছে তাগোরে ডাক দিলে তারা বোতল (আগুন নির্বাপক) নিয়া আসছে আগুন নিভাইতে। কিন্তু আগুন নিভে না। তাদের বলছি পানির গাড়ি নিয়া আসেন। তারা বলে ওপর থেকে আমাদের হুকুম আসে নাই। হুকুম আসছে ৭টার পরে। পরে গিয়ে তারা পানি নিয়ে আসছে সেইটারও স্প্রিড নাই। সারা দেশের ফায়ার সার্ভিসের মেইন অফিস এইখানে, আর এইখানে বলে তাদের পাম্পে পানি নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৮টার দিকে তাদের বলছি পানি বাড়ান। তারা বলে বছরে দুই একবার আগুন লাগবোই, ঈদে আগুন লাগেই।’ সিদ্দিকবাজার ফায়ার সার্ভিসে আগুন নেভানোর জন্য পর্যন্ত পানি ছিল না মন্তব্য করে আরেক ব্যবসায়ী সুলতান বলেন, ‘বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিসের হেড অফিস এটা, এইখানে পানি থাকবো না তো কই থাকবো। সকালে তাদের যথেষ্ট পানি ছিল না। পরে ঢাকার অন্যান্য জায়গা থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোক এসে আগুন নেভানোর কাজ করছে।’
ফায়ার সার্ভিস সকালে মার্কেট রক্ষার চাইতে পাশে থাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মন্তব্য করে আরেক ব্যবসায়ী নাঈম বলেন, শুরুতে এত ঘটনা ঘটতোই না। যখন সকালে আমি আসি তখন ওপরে একটু আগুন ছিল, তখন ঠিক মত পানি দিলে একটা দুইটা দোকান পুড়তো। কিন্তু তারা হাতে কইরা আগুন নিভানোর দুইটা বোতল নিয়া আসছে। পরে যখন আগুন লাগছে তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দিকে পানি দিতাছিল যেন সেই দিকে আগুন না যায়। এর আগে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলের অপরপাশে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর প্রধান কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা।
অপর একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই নিজের দোকানের মালামাল বের করে ফেলেছিলেন লামিয়া ফ্যাশনের কর্ণধার জনি ও তার কর্মচারীরা। বের করে সেগুলো রাখেন মার্কেটের সামনের রাস্তায়। এর মধ্যেই টিনের মার্কেট পুড়ে তাদের মালামালের ওপরই পড়ে। ফলে পুড়ে যায় প্রথম দফায় উদ্ধার করা আট লাখ টাকার কাপড়। ভুক্তভোগী জনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করেও মালামালগুলো রক্ষা করতে পারলাম না। তখন যদি মালামাল রাস্তায় না রেখে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে পারতাম, তাহলে পুড়তো না। তবে মানুষের হুড়োহুড়ি ও মালামালের অনেক স্তূপ হয়ে যাওয়ায় নিজেরগুলো সরিয়ে নিতে পারিনি। তিনি বলেন, মার্কেট পুড়ে মালের ওপর পড়লো, আর চোখের সামনে সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। দাউ দাউ করে ধরে যাওয়া আগুনের মধ্য থেকে এক বস্তা মালও শেষ সময়ে সরাতে পারিনি। তাপ আর ধোঁয়ার কারণে এক মিনিট টেকা যাচ্ছিল না। এ ব্যবসায়ী বলেন, বঙ্গ মার্কেটের সব দোকান পুড়ে গেছে। প্রথমে এ মার্কেটে আগুন লাগায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী কোনো মালামাল বের করতে পারেননি। সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। নিচতলায় দোকান করতেন যারা, তাদের গোডাউন ছিল উপরে। তাদেরও সব শেষ।
ডিএসসিসি সচিব আকরামুজ্জামান জানান, বঙ্গবাজারে লাগা অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ডিএসসিসি সচিব আকরামুজ্জামানের সই করা এক দপ্তর আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তাকে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন-ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর (১৩. ১৯ এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড), ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, সম্পত্তি কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর)।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার। এমন দাবি করে প্রাথমিকভাবে সাতশ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চেয়েছন। তিনি আরও বলেন, সব পুড়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই আগুন নেভার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আমাদের জানা মতে, শুধু বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটেই আড়াই হাজারের মতো দোকান রয়েছে। এখানে ছোট ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান করেন। সামনে ঈদ। সবাই ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার পণ্য তুলেছেন দোকানে। এমন সময় এই অগ্নিকাণ্ড বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে। তিনি বলেন, এই ব্যবসায়ীদের পুঁজি বলতে দোকানের মালামালই। মালামাল পুড়ে গেলে তাদের আসলে পুুুুঁজি বলতে সব শেষ। এখন তাদের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, রমজানের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে দিতে প্রাথমিকভাবে সাতশ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হোক।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্ল¬ব কুমার জানান, পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ভেতর পুলিশ ব্যারাকের চারতলা ভবনে আগুন লেগেছে। এতে ওই ভবনের সবকটি কক্ষ পুড়ে গেছে। ১১টা ১৫ মিনিটে জলকামান এসেছে। ফায়ার সার্ভিস পানি দিচ্ছে। ভবনটি মহানগর শপিং কমপে¬ক্স লাগোয়া। পরে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা জ্বলে, কয়েকটি মার্কেটের কয়েকশ দোকান পুড়িয়ে অবশেষে নিয়ন্ত্রণে আসে বঙ্গবাজার মার্কেটের আগুন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল বঙ্গবাজার মার্কেটটিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর সংশ্লি¬ষ্টদের ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কথা শোনেননি। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) চার বছর আগেই বঙ্গবাজার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেট ২০১৯ সালে করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তখন নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় মার্কেট সমিতি নতুন ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে এবং হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তিনি দুপুর সোয়া তিনটার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা ভোরে আগুনের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। পৌনে সাতটার মধ্যে সব সিনিয়র অফিসার ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। আমরা এসে ভয়াবহ আগুন দেখি। তখন থেকেই ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। আমরা রাজারবাগ থেকে পাঁচটি ওয়াটার ক্যানন এনে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় দুই লাখ লিটার পানি সাপ্লাই দিয়েছি। আমাদের পুলিশের প্রায় দুই হাজার ফোর্স এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করে। তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন। র‌্যাব-বিজিবিসহ তিন বাহিনীর সদস্যরা একযোগে দায়িত্ব পালন করেছেন। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় কিছুক্ষণ আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমাদের একটি ব্যারাকে আগুন লেগেছে। আমাদের সব সদস্য নিরাপদে বের হতে পেরেছেন। মালামাল বের করতে পারিনি। ডকুমেন্টস ও মালামালের কী ক্ষতি হয়েছে তা পরে জানা যাবে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, বঙ্গবাজারসহ আশপাশের ৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা করবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

 

 

 

Related Articles

Back to top button