আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তোশাখানা মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করা হয়েছে। রোববার আদালতে হাজির হওয়ায় ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জাফর ইকবাল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা বাতিল করেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, ইসলামাবাদের বিচারিক আদালত ভবনের বাইরে গাড়ির ভেতরে থেকে মামলার নথিপত্রে স্বাক্ষরের পর তাকে বাসায় চলে যাওয়ার অনুমতি দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জাফর ইকবাল। তোশাখানা মামলায় পিটিআই প্রধানকে অভিযুক্ত করা হবে।
পুলিশ ও পিটিআই কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে শনিবার ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ায় ইসলামাবাদের আদালত তোশাখানা মামলার শুনানি ৩০ মার্চ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেছে। পুলিশের টিয়ার গ্যাস ব্যবহার আর আদালতের জানালায় পিটিআই কর্মীদের পাথর নিক্ষেপের কারণে আদালত কক্ষের ভেতরে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে ঘটনাস্থলে থাকা ডন ডটকমের প্রতিবেদক নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, একই দিন পুলিশ পাকিস্তান পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খানের জামান পার্ক ম্যানশনে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অ্যাসল্ট রাইফেল এবং গুলি উদ্ধার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় তল্লাশিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পিটিআইয়ের ৬০ জনেরও বেশি কর্মী-সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার ইমরান খান ইসলামাবাদের আদালতে তোশাখানা মামলার শুনানিতে অংশ নিতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পাঞ্জাব পুলিশ তার বাসভবনে প্রবেশ করে। লাহোরের ওই বাসভবনে প্রবেশের সময় পুলিশের সাথে পিটিআই কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এর আগেও, কয়েকবার ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ।
পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) উসমান আনোয়ার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পুলিশ জামান পার্কে তল্লাশি অভিযান শেষ করেছে। এ সময় ইমরান খানের বাড়ি থেকে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং প্রচুর সংখ্যক বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া মোলোতোভ ককটেল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এমন কাঁচের বোতল ও গুলতি দিয়ে ছুড়ে মারার শত শত মার্বেলও ইমরান খানের বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়।চেয়ারম্যানের বাড়িতে আরও পাঁচটি কালাশনিকভ পাওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে আইজি বলেন, বন্দুকগুলো আইনি অবস্থা অর্থাৎ সেগুলো লাইসেন্স করা কি না তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেছিলেন, অভিযানের আগে জামান পার্কের আশপাশের রাস্তা শিপিং কন্টেইনার দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। যেগুলো এখন সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।
তোশাখানার নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা বা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।
ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।
গত আগস্টে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) সদস্য মোহসিন নওয়াজ রানঝা ইমরানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি।
এ সম্পর্কে গত ২২ আগস্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ নির্বাচনক কমিশনকে দেওয়া এক চিঠিতে ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজের ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে নামমাত্র মূল্যে এসব উপহার নিয়েছেন এবং এসব উপহারের অধিকাংশই তিনি বিক্রি করেছেন।
উপহারের মধ্যে কিছু দামি হাতঘড়িও রয়েছে। এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি ২০ লাখ রুপি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ইমরান খান এসব উপহার গ্রহণ করেছিলেন বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন স্পিকার।