বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: বাংলাদেেশের টেকনাফে মিয়ানমারের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের তালিকা যাচাইয়ে মিয়ানমার সরকারের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের টেকনাফে পৌঁছেছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে নাফ নদী হয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর জেটিতে এসে পৌঁছায় প্রতিনিধিদলটি। জানা গেছে, প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্ত পরিবারের বাদ পড়া সদস্য রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিনিধি দল যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। বুধবার সকাল ১১টায় টেকনাফ সদরের স্থলবন্দরে ভেতরে ভবনে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধিসহ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত আছেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে স্পিড বোটযোগে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিমের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাসে করে লেদা-নয়াপাড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী ২০ পরিবারের ৭০ জন রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে টেকনাফ স্থলবন্দরের ভেতরে রেস্ট হাউসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তারা প্রতিনিধিদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উদ্যোগী হওয়ায় মিয়ানমারের পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। তবে এর আগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি সই হলেও গত প্রায় ছয় বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বেঁধে দেওয়া সময়ে এক দফা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এ ঘটনার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় মতে, বৈঠকটি মূলত মিয়ানমারে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা যাছাই-বাছাই নিয়ে। বাংলাদেশের পাঠানো তালিকা থেকে মিয়ানমার যে সমস্ত রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক হিসেবে যাচাই-বাছাই করে ফিরতি তালিকা দিয়েছিল তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা চলবে। এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। শুরুতে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা এখন বলা হচ্ছে। তালিকার বাইরে পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটির রুটম্যাপ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। মূলত ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়। এরপর মিয়ানমার ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার ফিরতি তালিকা পাঠায়। সেখানে অনেক পরিবারের সদস্য বাদ পড়ে। বিষয়টি তাদের (মিয়ানমারকে) জানানো হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে তারা (মিয়ানমার) আগ্রহ প্রকাশ করে। বাদপড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারা কথা বলছেন, কেন বাদ পড়েছেন এবং তাদের দলিলপত্র দেখছেন।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে আসা টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেতা মো. জাফর জানান, মিয়ানমার থেকে আাসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আামদের ডাকা হয়েছে। আমার মতো আরও অনেকে এসেছে। মূলত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। সাক্ষাৎ শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের যে তালিকাটি পাঠিয়েছিল তা যাচাই করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। প্রতিনিধিদলটি আরআরআরসির সঙ্গে বৈঠক করবে। পাশাপাশি টেকনাফ স্থলবন্দরে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবে। তিনি জানান, প্রতিনিধিদলটি কোনো রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবে না। সকালে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বন্দর বিশ্রামাগার চত্বরে নিয়ে আসা হয়েছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) খালিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের ১৭ জনের প্রতিনিধি দল এসেছে। তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

Related Articles

Back to top button