
টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পর পাকিস্তানে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অবস্থা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পাকিস্তানের ইতিহাস বলছে, কোনও প্রধানমন্ত্রীই তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোট খারিজ এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর দেশটিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে; তা শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়িয়েছে। বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় পরিষদে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশে আগাম নির্বাচনের যে ডাক দিয়েছেন তার বৈধতা নিয়ে সোমবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনীত করেছেন বলে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী জানিয়েছেন।
গত রোববার পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার কাসিম শাহ সুরি অনিবার্যকারণবশত ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল করে দেন। সেশনের শুরুতেই ডেপুটি স্পিকার জানিয়ে দেন, অনাস্থা প্রস্তাবটি সংবিধানের বিরুদ্ধে। সংবিধান মেনেই এই অনাস্থা প্রস্তাবকে বাতিল করে দিচ্ছি। পার্লামেন্টে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যহীনতার অভিযোগ তোলেন। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে-সে কথার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। তার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কাসিম সুরি বলেন, কোনো বিদেশি শক্তিকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, অনাস্থা প্রস্তাব গত ৮ মার্চ উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এটি আইন ও সংবিধান অনুযায়ী হওয়া উচিত।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খাজা হারিস বলেছেন, আমার কোনো সন্দেহ নেই যে আদালত সরকারের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, আদালত স্পিকারকে অনাস্থা ভোটেই যেতে বলতে পারে।
বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, আমরা নতুন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমরা নিয়ম ও সংবিধান লঙ্ঘন হবে। পাকিস্তানের সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ হারিস বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবের প্রক্রিয়া ভোট ছাড়া এই পদ্ধতিতে শেষ করা যাবে না। হারিস বলেন, যদিও অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি গত রোববার হওয়ার কথা ছিল। আদালত পরবর্তী তারিখে ভোট হওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। অচলাবস্থা দেখা দিলে দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিতে পারে।
সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, অনাস্থা প্রস্তাবে সংসদে যা ঘটেছে তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ২০১৮ সালে সেনাদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইমরান। সামরিক বাহিনী আপাতদৃষ্টিতে এখন ইমরানের পক্ষে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে।
এদিকে, দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম মিত্র মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) জোট ছেড়ে যাওয়ায় সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান। গত রোববার তার বিরুদ্ধে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অধিবেশন শুরুর পর অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন সংসদের ডেপুটি স্পিকার। বিরোধীদের সাথে এই বিরোধ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর প্রায় অর্ধেক সময় ধরে সেনা শাসনের অধীনে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটিকে ব্যাপক সাংবিধানিক সংকটের মুখে ফেলেছে।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, বর্তমান পার্লামেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তান নতুন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সেই নির্বাচনে ইমরান খান জয়ী হলেও আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির বিরোধী দলগুলোও আগাম নির্বাচন চায়, যদিও সংসদীয় ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানের রাজনৈতিক পতন ঘটিয়েছে তারা।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা শেহবাজ শরিফ। সোমবার পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, জাতি আজ হতবাক। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং গণমাধ্যমও ইমরান খানের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। ইমরান খানের শেষ চক্রান্ত গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলাকে ধ্বংস করবে, সেটি কেউ অনুমান করতে পারেন নাই, লিখেছে ডন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনীত করেছেন বলে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, পিটিআইয়ের মূল কমিটির বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক বিচারপতি গুলজার আহমেদকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারপরই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গুলজার আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে লেখা চিঠিতে বলেছেন, আমি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের জন্য পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি গুলজার আহমেদের নাম প্রস্তাব করছি। এর আগে, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং বিরোধী নেতা শেহবাজ শরিফের কাছে চিঠি লিখে তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট আলভি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোট খারিজ এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর দেশটিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে; তা শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়িয়েছে। বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় পরিষদে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশে আগাম নির্বাচনের যে ডাক দিয়েছেন তার বৈধতা নিয়ে সোমবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে।