আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আবারও বিক্ষোভ করেছেন লাখো ইসরায়েলি নাগরিক। মূলত নেতানিয়াহুর নতুন সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শনিবার (৪ মার্চ) এই বিক্ষোভ আয়োজন করা হয় এবং এতে লাখো মানুষ অংশ নেন।এ নিয়ে টানা নবম সপ্তাহ লাখো বিক্ষোভকারী ইসরায়েলি শহরগুলোর রাস্তায় নামলেন। রোববার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতে তেল আবিব এবং অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছিল। তবে পরে পুলিশের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবে বাধা ভেঙে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছেন এবং রাস্তা অবরোধ করে আগুন জ্বালাচ্ছেন। পুলিশ অবশ্য পরে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করে।শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ৫৩ বছর বয়সী ইতিহাসের শিক্ষক রনেন কোহেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমি শাসকদলের বিপ্লবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে এসেছি, যা ইসরায়েলি সরকার আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমি আশা করি, বিশাল এই বিক্ষোভ কার্যকর হবে এবং প্রমাণ করবে যে- আমরা হাল ছেড়ে দিই না।’ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা সম্প্রতি উন্মোচন করেছে ইসরায়েলের নতুন সরকার। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের বিচারিক স্বাধীনতাকে পঙ্গু করবে, দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নষ্ট করবে এবং ইসরায়েলের আদালত ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে।
এছাড়া নতুন এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেমকে হুমকির মুখে ফেলবে বলেও দাবি করে আসছেন বিক্ষোভকারীরা।
রয়টার্স বলছে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার সংস্কারের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে লক্ষ্যবস্তু করার পর জানুয়ারির প্রথম দিক থেকে প্রতি সপ্তাহের শনিবার বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলি বিক্ষোভ করে আসছেন।
মূলত ওই আইন পাস হলে আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে সীমিত হয়ে যাবে। একইসঙ্গে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা পাবেন পার্লামেন্টের আইন প্রণেতারা।
বিতর্কিত এই আইনের সমর্থকরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা থেকে লাগাম টানতে হবে। অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, এই পরিকল্পনা আদালতকে দুর্বল করবে, নাগরিক স্বাধীনতাকে বিপন্ন করবে এবং পশ্চিমা মিত্রদের সাথে সম্পর্কের পাশাপাশি ইসরায়েলি অর্থনীতিরও ক্ষতি করবে।রয়টার্স বলছে, গত বুধবার থেকে বিক্ষোভের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেদিন ইসরায়েলি পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বিকট শব্দ উৎপন্নকারী স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং দেশব্যাপী ‘অবরোধের দিন’ তেল আবিবে সংঘর্ষ হয়।
৬৮ বছর বয়সী ওফির কুবিটস্কি নামে এক শিক্ষক শনিবার বলেছেন, ‘ইসরায়েল একটি স্বৈরাচার দেশে পরিণত হওয়ার মতো বড় বিপদের মুখে রয়েছে। আমরা এখানে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত বারবার বিক্ষোভ করতে আসব।’