টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রতি ফের আরেকদফা নিবিড় বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করলো ভারতে। বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য আরেকটি ট্রানজিট দিয়েছে ভারত। এর মাধ্যমে দিল্লি এয়ার কার্গো হয়ে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিশাল বাজারে প্রবেশের বাড়তি সুবিধা পেল বাংলাদেশি পণ্য। ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়েছে, শনিবার এ অনুমতি দিয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাপেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)। এর আগে শুধু কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে অন্য দেশে আকাশপথে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া হয়।
আগামী বুধবার থেকে এ সুবিধা মিলবে। আগ্রহী পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২২ জুনের ২৯/২০২০-কাস্টমস সার্কুলার সংশোধনের মাধ্যমে এ সুযোগ তৈরি করা হয়। বোর্ডের পক্ষ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ অনুমোদন কার্যকর থাকবে। আগের নিয়ম অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২২ জুন থেকে ভারতের পেট্রাপোল স্থল বন্দরের শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দর এবং আকাশপথে তৃতীয় দেশে পরিবহণের ট্রানজিট সুবিধা পেয়ে আসছিল বাংলাদেশ। নতুন সুবিধায় একই শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে সড়কপথে দিল্লির এয়ার কার্গো কমপ্লেক্স হয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ।
দিল্লির ক্যাল লজিস্টিকস সলিউশনসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বিনীত মালহোত্রা বলেন, আকাশপথে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে দিল্লি এয়ার কার্গো একটি অন্যতম প্রধান হাব। সেখানে ট্রানজিট সুবিধা পাওয়ায় কিছুটা সাশ্রয়ে বিদেশের বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। কেননা, দিল্লি এয়ার কার্গো ভাড়া বাংলাদেশের তুলনায় অনেকটাই কম।
এদিকে এক বছর বন্ধ থাকার পর ট্রানজিটের পণ্য নিয়ে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে ভিড়েছে ভারতীয় একটি জাহাজ। গতকাল শনিবার রাতে ৯৫৯ টন স্টিলবার নিয়ে ভারতীয় জাহাজ এমভি ভুলকার-১ আশুগঞ্জে পৌঁছে। ভারত-বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকল চুক্তির আওতায় এসব পণ্য আনা হয়েছে। বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সের মাধ্যমে এসব পণ্য দু-এক দিনের মধ্যে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পৌঁছানো শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, ট্রানজিটের আওতায় সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারিতে ভারতীয় কয়লাবাহী একটি জাহাজ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে গিয়েছিল। এর পর আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল। এক বছর পর ভারতীয় টাটা কোম্পানির ৯৫৯ টন স্টিলবার পাঠানো হলো। ট্রানজিট-সংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা শেষে এসব পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের এসএম করপোরেশনে পাঠানো হবে।ভারতের কলকাতা থেকে খুলনা হয়ে আশুগঞ্জে গিয়েছে জাহাজটি। এই পণ্য পরিবহনে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সের আধিকারিক নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ-কালের (রবি বা সোমবার) মধ্যে মালপত্র পরিবহন শুরু হবে।
আশুগঞ্জ-ভৈরব নৌবন্দরের বন্দর আধিকারিক ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক রেজাউল করিম বলেছেন, নৌবন্দরে জাহাজ অবস্থানকালে দৈনিক ৩১৫ টাকা হারে বার্থিং চার্জ এবং টনপ্রতি ৩৪ টাকা হারে ল্যান্ডিং অ্যান্ড শিপিং চার্জ নেওয়া হবে। টনপ্রতি ১০ টাকা হারে তদারকি চার্জ দেবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও নির্ধারিত চার্জ নেবে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকল চুক্তি সই হয়। এর আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে ‘পোর্ট অব কল অ্যান্ড ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট’ ঘোষণা করা হয়। এ চুক্তির আওতায় ২০১১ সালের পর বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালপত্রসহ বিভিন্ন সময় খাদ্য ও কয়লা পরিবহন করেছে ভারত।