টাইমস ২৪ ডটনেট: বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২২ (জিএইচআই)-এ ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৬তম; আর ২০২০-এ ৭৫তম। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট, বর্তমানে বাংলাদেশ উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় উন্নতি করলেও নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে দেশে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন এবং শিশুমৃত্যুর হার হিসাব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয় যে কোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়। এসব সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু অপুষ্টির শিকার।
বয়সের তুলনায় খর্বকায় ও কৃশকায় শিশুর সংখ্যাও দেশে কম নয়। এক্ষেত্রে শিশু জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যাওয়াও একটি বড় সমস্যা। এ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় তা কম। এ কারণে সামগ্রিকভাবে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে।
জিএইচআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। তাই সার্বিকভাবে বলা যায়, ক্ষুধা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে আগামীতে এ উন্নতির গতি আরও বাড়াতে হবে।
অনেকের ধারণা, উৎপাদন বাড়লেই দেশে অপুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান হবে। এ ধারণা সঠিক নয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থাটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, এ অঞ্চলে যত দুর্ভিক্ষ হয়েছে, তাতে খাদ্যপণ্যের সরবরাহের ঘাটতি ছিল না।
ঘাটতি ছিল কর্মসংস্থান ও আয়-রোজগারের; ঘাটতি ছিল মানুষের খাদ্যপণ্য কেনার সক্ষমতায়। কাজেই টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে মানুষের খাদ্যপণ্য কেনার সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা ঠিক, বিগত বছরগুলোতে সর্বস্তরের মানুষের খাদ্যপণ্য কেনার সামর্থ্য বেড়েছে। তবে বর্তমানে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের কষ্ট অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতাসহ যেসব কারণে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেসব সমস্যার সমাধানে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে অবিলম্বে।
সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে যাতে মানুষের দুর্ভোগ না বাড়ে, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ববাজারের অস্থিরতার কারণে দেশের স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট আগামীতে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও নিতে হবে।
গত দুই দশকে দেশের মানুষের সার্বিক জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং তাদের একটি অংশ অতিদরিদ্র। এরা অসহায় ও দুস্থ। এদের দিকে অধিকতর দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। অতিদরিদ্রদের একটি বড় অংশ চরম পুষ্টিতে ভোগে। অপুষ্টিতে ভোগার কারণে নানারকম রোগে ভুগলেও তারা অর্থাভাবে সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারে না। ক্ষুধা ও অপুষ্টির হার কমিয়ে আনতে এই শ্রেণির মানুষের প্রতি সহায়তার হাত আরও সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। সূত্র: যুগান্তর।