topআন্তর্জাতিক

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে মানুষ

এনামুল হক, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ১১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। গত সোমবারের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের নিচে আটকে পড়া শত শত মানুষকে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশ দুটির উদ্ধারকারীরা বলেছেন, তীব্র ঠান্ডা এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে লোকজনকে জীবিত উদ্ধারের সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লোকজনকে উদ্ধারে সময়ের বিপরীতে লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে ঠান্ডায় বরফে জমে যাচ্ছে মানুষ। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া লাখ লাখ মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ জ্বালিয়ে ঠান্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে আন্তর্জাতিক সহায়তা মাত্র পৌঁছাতে শুরু করেছে।


সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তাদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরের বাসিন্দা আলি সাগিরোগলু বলেন, আমি আমার ভাইকে ধ্বংসাবশেষ থেকে ফিরে পাব না; আমি আমার ভাগ্নেকে ফিরে পাব না। চারপাশে দেখুন, এখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা নেই। তিনি বলেন, দুই দিন ধরে আমরা এখানে সরকারি কাউকে দেখতে পাইনি… শিশুরা ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। শীতকালীন ঝড় তুরস্কের অনেক রাস্তায় দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে— ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সড়ক প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিছু অঞ্চলে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় আসা লোকজনের জন্য নতুন বিপদ তৈরি করেছে শীতল বৃষ্টি আর তুষারপাত। লাখ লাখ মানুষ দেশটির মসজিদ, স্কুল, এমনকি বাস স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে। আর ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া অনেকে এখনও উদ্ধারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তবে তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে বলে তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানোম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। আহত এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য আমরা জরুরি মেডিকেল টিমের নেটওয়ার্ক চালু করেছি। ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তারা মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ভয়াবহ এই ভূমিকম্প ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশগুলোকে দুর্যোগকবলিত এলাকায় সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আমার পুরো পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আমার ছেলেরা, আমার মেয়ে, আমার শাশুড়ি… তাদের বের করে আনার আর কেউ নেই,’ রক্তমাখা মুখ নিয়ে তীব্র ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পশমের শালে জড়ানো আলী বাত্তাল কান্না করতে করতে এসব কথা বলেন। ৬০ বছর বয়সের কোটায় থাকা এই ব্যক্তি বলেন, আমি তাদের কণ্ঠ শুনতে পেয়েছি। আমি জানি, তারা জীবিত। কিন্তু কেউই তাদের উদ্ধার করছেন না। ভূমিকম্পের ৪০ ঘণ্টা পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি ভবনের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় ১২ বছর বয়সী এক কন্যা শিশুকে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানিয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনার আগেও সিরিয়ার যুদ্ধ পূর্ববর্তী বাণিজ্যিক কেন্দ্র আলেপ্পোর বেশিরভাগ স্থাপনাই ছিল জরাজীর্ণ। বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে তুরস্কের অবস্থান। এর আগে ১৯৩৯ সালে দেশটিতে সোমবারের মতো ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। ওই ভূমিকম্পে দেশটির পূর্ব এরজিনকান প্রদেশে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষ নিহত হয়। এরপর ১৯৯৯ সালে তুরস্কের ডুজসে অঞ্চলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।

Related Articles

Back to top button