topআন্তর্জাতিক

ধ্বংস্তুপের নিচ থেকে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা : ভয়াবহ ভূমিকম্পে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তুরস্ক ও সিরিয়ায় শত শত বাড়িঘর ধসে পড়ার পর সেগুলোর নিচে আটকা থাকা মানুষদের বাঁচাতে চলছে উদ্ধার অভিযান। প্রাণহানির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তুরস্কেই মারা গেছেন ২ হাজার ৯২১ জন। আর সিরিয়ায় এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুই দেশে আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ। তবে ভূমিকম্পের বিস্তৃতি এবং ধ্বংস এতই বিশাল যে, উদ্ধারকারীরা সব জায়গায় পৌঁছাতে পারছেন না। এছাড়া তুষারপাত, বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। তুরস্কের দক্ষিণ দিকের হাতেই প্রদেশে সোমবার সারারাত কোনো উদ্ধার কাজ করা যায়নি। মঙ্গলবার সকালেও কোনো উদ্ধারকর্মী আসেননি।


হাতেই প্রদেশের দানিজ নামের এক পুরুষ বাসিন্দা জানিয়েছেন, সেখানে অনেক মানুষ ধ্বংস্তুপের নিচের আটকে পড়ে আছে। তারা সাহায্যের জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। কিন্তু উদ্ধারকারীর না আসায় তারা কিছুই করতে পারছেন না। বৃষ্টির মধ্যে চোখ ভেজা কান্নারত দানিজ বলেছেন‘ তারা (ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে পড়া মানুষ) চিৎকার করছেন। কিন্তু কেউ আসছে না।’‘আমরা হতাশ, ও আল্লাহ….তারা চিৎকার করছে। তারা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না…সকাল থেকে এখানে কেউ নেই।’এরমধ্যে সিরিয়ার উদ্ধারকারী সংস্থা হোয়াইট হেলমেট জানিয়েছে, ‘ধ্বংস্তুপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তারা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন।’


এদিকে ভূমিকম্পে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর যারা এখনো ধ্বংসস্তুূপের নিচে আটকে আছেন, কিন্ত বেঁচে আছেন—তাদের যদি উদ্ধার না করা যায় তাহলে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার পেরিয়ে যেতে পারে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জানিয়েছে, তুরস্কে মৃতের সংখ্যা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ২ হাজার ৩৭৯ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৯২১ জনে পৌঁছেছে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই বলেছেন, তুরস্কের ১০টি প্রদেশে ১৪ হাজার ৪৮২ জন আহত হয়েছেন এবং ৭ হাজার ৮৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরি ও অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সিরিয়ায় সর্বশেষ এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই দেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৫ জনে পৌঁছেছে।
এদিকে, ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে। স্থানীয়দের বরাতে বলছে, তারা ভূমিকম্পের পর সাহায্য করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে যাওয়ার জন্য জড়ো হয়েছেন। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে চেয়েছেন। সেখানার উদ্ধার কাজে সহযোগিতার জন্য তারা ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে ভিড় করছেন। তবে, বিবিসি যাচাই করতে পারেনি যে ছবিতে দেখা যাওয়া সবাই স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আশা করছে কি-না। তবে, ভিড়ের মাত্রা অবশ্যই অস্বাভাবিক।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের পর আরো অন্তত ৭৭টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়, যার মধ্যে তিনটি ছিল রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি। আবার একটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।


এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল তুরস্কে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ককে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ বিশ্বের বহু দেশ সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এদিকে, তুরস্কে ভূ‌মিক‌ম্পে দেশ‌টির আজাজ শহরে নিখোঁজ দুই বাংলাদেশির ম‌ধ্যে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া নুর আলম না‌মের ওই বাংলা‌দে‌শি সুস্থ আছেন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নুরে আলম এ তথ্য জা‌নি‌য়ে‌ছেন। তি‌নি জানান, তুরস্কে ভূমিকম্পে নিখোঁজ দুই বাংলাদেশির ম‌ধ্যে নুর আলম না‌মের এক বাংলা‌দে‌শি‌কে উদ্ধার করা হ‌য়ে‌ছে। কিন্তু মো. রিংকু না‌মের এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তারা দু`জন তুরস্কের আজাজ শহরে বসবাস কর‌ছি‌লেন।


জানা গে‌ছে, নি‌খোঁজ বাংলা‌দে‌শি রিংকুর বা‌ড়ি বগুড়ায়। সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা ৩ হাজার ৬০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। এখনও অসংখ্য মানুষ ধসে যাওয়া হাজার হাজার ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে। যে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে কর্তৃপক্ষ।

Related Articles

Back to top button