টাইমস২৪ ডটনেট, ঢাকা: ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাতের সময় আইএমএফ-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ এ আশ্বাস দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
করোনা মহামারির প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের অগ্রগতির গতি কিছুটা কম হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব থেকে বাঁচাতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহাযতা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশও সমস্যায় পড়েছে। সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনকে টার্গেট করে সরকার উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সকল অনাবাদী জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছে, এমনকি অনেক উন্নত দেশেও। অগ্রিম ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে সহায়তা চেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেলআউটের জন্য নয় বরং একটি আগাম ব্যবস্থা হিসেবে আইএমএফের কাছে সহায়তা চেয়েছি।
আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ এবং উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। এই আকাক্সক্ষা পূরণে আইএমএফ সমর্থন অব্যাহত রাখবে। অ্যান্তইনেত মনসিও আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের দীর্ঘদিনের অংশীদারত্ব রয়েছে। আইএমএফ এই অংশীদারত্বকে যত্নসহকারে লালন করে। আমি সে অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করতে এখানে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির ভয়ানক প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কঠিন পরিস্থিতির কারণে পুরো বিশ্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলো বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে; বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির চাপ, নিত্যপণের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমস্যা। এসব সমস্যা মোকাবিলায় আইএমএফ বাংলাদেশের প্রচেষ্টার পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন অ্যান্তইনেত মনসিও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, গত এক দশক বাংলাদেশ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাক্ষাৎকালে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং আইসিটি ক্যাম্প বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, সিনিয়র অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং আইএমএফ-এর ঢাকার আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে। সাক্ষাতকালে আইএমএফ প্রতিনিধি ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ যখন আইএমএফের সদস্যপদ লাভ করে তখনকার দুটো ছবি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।