topআন্তর্জাতিক

ইরানে আরও হামলার পক্ষে নেতানিয়াহু, ট্রাম্পের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সংঘাত

টাইমস ২৪ ডটনেট: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইরানকে ইসরায়েল ও বিশ্বের জন্য একটি ভয়াবহ হুমকি হিসেবে তুলে ধরে আসছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জুন মাসে সেই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালান। তবে এতে নেতানিয়াহু সন্তুষ্ট নন বলেই মনে হচ্ছে। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। আর তখন তিনি ইরানের বিরুদ্ধে আরও সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে চাপ দিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।তবে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মিত্ররা আবারও ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দামামা বাজাতে শুরু করেছেন। তাদের দাবি, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলা করা প্রয়োজন।তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সঙ্গে আরেকটি সংঘাত ট্রাম্পের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হবে।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের জ্যেষ্ঠ ফেলো সিনা তুসি বলেন, ট্রাম্প যেখানে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চাইছেন, সেখানে নেতানিয়াহু গোটা অঞ্চলে সামরিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অনুসরণ করছেন।তুসি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে স্থায়ীভাবে জড়িয়ে রাখার, ইরানের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর এই আকাঙ্ক্ষা—যার লক্ষ্য কার্যত ইরানি রাষ্ট্রকে ভেঙে ফেলা—ইসরায়েলের সেই উদ্দেশ্যকেই প্রতিফলিত করে, যেখানে তারা প্রশ্নহীন আধিপত্য, প্রশ্নহীন শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্প্রসারণবাদ চায়।তিনি আরও বলেন, এটাই নেতানিয়াহুর লক্ষ্য এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে যে পথে ঠেলে দিতে চান তার মূল। কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য। কারণ ওয়াশিংটন এমন এক অঞ্চলে বেশি স্থিতিশীলতা চায়, যেখানে সরাসরি মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে না।

গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতা করার পর—যা ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই লঙ্ঘন করছে—নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরা ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, তিনি নাকি ৩ হাজার বছরে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এনেছেন।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সদ্য প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য এখন অংশীদারত্ব, বন্ধুত্ব ও বিনিয়োগের অঞ্চল হয়ে উঠছে এবং এটি আর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অগ্রাধিকার নয়।যুক্তরাষ্ট্র যখন মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক ও কৌশলগত উপস্থিতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তখন ইসরায়েল এমন একটি যুদ্ধের পক্ষে লবিং করছে, যা ওয়াশিংটনকে আবার সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে।গত কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিজের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে।কিন্তু ট্রাম্প জোর দিয়ে বলছেন, জুন মাসে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সেই কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।ট্রাম্পের এই মূল্যায়ন সঠিক হোক বা না হোক, বিশ্লেষকদের মতে, তার এই ঘোষণা ইসরায়েলকে নতুন ‘ভয়ের প্রতীক’ খুঁজতে বাধ্য করেছে, যাতে প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিরোধিতা না করতে হয়।
কূটনীতির পক্ষে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বলেন, ট্রাম্প যখন ঠিক বা ভুলভাবে পারমাণবিক ইস্যু সমাধান হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তখন ইসরায়েল তেহরানের ওপর চাপ বজায় রাখতে ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতে মনোযোগ সরাচ্ছে।
পারসি আল জাজিরাকে বলেন, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে চাপ দিচ্ছেন—এবার ক্ষেপণাস্ত্রকে কেন্দ্র করে। কারণ ট্রাম্প পারমাণবিক ইস্যুতে ফিরতে রাজি নন; তিনি বলেছেন, তিনি সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন, কর্মসূচিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলিরা লক্ষ্যপথ বারবার বদলাবে, যাতে ইরানের সঙ্গে সংঘাতকে একটি অন্তহীন, স্থায়ী যুদ্ধে পরিণত করা যায়।
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ—ইসরায়েলের মতো নয়, যাদের কাছে অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।এছাড়া ইরান কখনও উসকানি ছাড়া ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েনি।

Related Articles

Back to top button