দিল্লিতে বিস্ফোরণের পর কাশ্মিরের হাসপাতালে তল্লাশি, উদ্বেগে চিকিৎসকরা

টাইমস ২৪ ডটনেট: ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের শ্রীনগরের একটি বড় হাসপাতালে গত মাসে চিকিৎসকদের লকার ও আলমারিতে পুলিশ অভিযান চালানোর পর থেকে মারাত্মক মানসিক চাপে ভুগছেন সেখানে কর্মরত চিকিৎসক। তিনি ছাড়াও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক বিবিসিকে জানিয়েছেন, দিল্লির লাল কেল্লার কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তের অংশ হিসাবে তল্লাশি অভিযান, তাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।ভারতের রাজধানী দিল্লির লাল কেল্লার কাছে গত ১০ই নভেম্বর একটি গাড়ি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়। ওই আত্মঘাতী গাড়ি বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন বহু মানুষ। ন্যাশানাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ) এই ঘটনার তদন্ত করছে।ওই বিস্ফোরণের পর চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তারা যে হাসপাতালে কর্মরত, সেখানকার লকারের তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কাশ্মিরি চিকিৎসকসহ আটজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।লাল কেল্লার বাইরে আত্মঘাতী হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে পুলিশ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হোয়াইট কলার মডিউলের সন্ধানে ছিল। এর সূত্র ধরে দিল্লি ও পাঞ্জাবের হরিয়ানা থেকে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছিল বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়।দিল্লি বিস্ফোরণের পর এনআইএ বলেছে, দিল্লির লাল কেল্লার কাছে ওই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিলেন ফরিদাবাদের আল ফালাহ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত কাশ্মিরি চিকিৎসক উমর উন নবী।এই ঘটনার পর থেকে শুরু হওয়া পুলিশি অভিযানের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন অনেক চিকিৎসক। শ্রীনগরের একটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তল্লাশি অভিযানকে কেন্দ্র করে তারা এতটাই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন যে চিকিৎসক কমিউনিটিতে একে অন্যকে ফোন করে সান্ত্বনা দিতেও ভয় পাচ্ছেন।
বিবিসির সঙ্গে কথোপকথনের সময় ওই তিনি বলেন, তল্লাশি অভিযান নিয়ে ইস্যু নেই। কারণ আমরা জানি এটি নিরাপত্তাজনিত কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে যেভাবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে এবং তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে তা ভাইরাল হচ্ছে, তাতে পুরো চিকিৎসক সম্প্রদায়কেই সন্দেহজনক দেখাচ্ছে।তার যুক্তি, পুরো ব্যাপারটাই নিঃশব্দে বা ঘোষণা না করেও করা যেত। আরো এক কাশ্মিরি চিকিৎসকের সঙ্গে কথোপকথনেও একই চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। তিনি অবশ্য ব্যাঙ্গালোরের এক কর্পোরেট হসপিটালের সঙ্গে যুক্ত।তিনি বলেছেন, অপরাধীর অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু এর সঙ্গে যদি কয়েকজন চিকিৎসক জড়িত থাকেন তাহলে বাকি চিকিৎসকদের কী দোষ? আমরা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি এবং এই জাতীয় অভিযানের ফলে আমাদের কাজে প্রভাব পড়ছে।পুরো বিষয়টিকেই নিরাপত্তাজনিত পদক্ষেপ বলে ব্যাখ্যা করেছে পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছে, এটি একটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রোটোকল। কাশ্মিরের সব জেলা হাসপাতালেই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।‘‘অনন্তনাগ মেডিকেল কলেজের ডা. মুজাম্মিল শাকিল গানাইয়ের লকার থেকে একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছিল। হাসপাতাল প্রশাসন এবং সমস্ত চিকিৎসক এই কাজে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন কারণ এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়।’’
পেশায় চিকিৎসক ডা. মুজাম্মিল শাকিল গানাই ফরিদাবাদের আল ফালাহ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত উমর উন নবীর সহকর্মী ছিলেন। অন্যদিকে, বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে লক্ষ্ণৌ থেকে এক নারী চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়।পাশাপাশি এই ঘটনায় বুধবার দিল্লি থেকে বিলাল নাসির নামের একজন ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ, যিনি জম্মু ও কাশ্মিরের বাসিন্দা। এই প্রসঙ্গে এনআইএ বলেছে, দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণের পরিকল্পনায় ডা. উমর উন নবীকে সাহায্য করেছিলেন বিলাল নাসির। এদিকে, কাশ্মির হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ প্রশাসন গত মাসে একটি সার্কুলার জারি করে চিকিৎসকদের তাদের লকারের রেজিস্ট্রেশন করার কথা বলেছিল।
অনন্তনাগ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল গানাইয়ের লকার এক বছর ধরে বন্ধ অবস্থায় ছিল। কারণ তিনি অনন্তনাগ মেডিকেল কলেজ ছেড়ে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণের আগেই তার ওই লকার থেকে একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ।পুলওয়ামার জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. আব্দুল গনি বট্ট গত সপ্তাহে বলেন, তিনি নিজেই পুলিশকে তার হাসপাতালের লকারগুলোর তল্লাশি করার কথা জানিয়েছিলেন। এর কারণ দীর্ঘদিন ধরে ওই লকার খোলা হয়নি।তিনি বলেছেন, এখানে কিছু লকার ছিল যেখানে কারো কোনো নাম লেখা ছিল না, আমরা পুলিশের উপস্থিতিতে সেই লকারগুলির তালা ভেঙে দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে আমরা মেডিকেল কোট এবং গ্লাভস ছাড়া আর কিছুই পাইনি।এই তল্লাশি অভিযানের বিষয়ে সম্মিলিতভাবে চিকিৎসকেরা এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে এই অভিযান নিয়ে তারা শঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাকিনা ইতো এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেই বিবৃতিতে তিনি তল্লাশি অভিযানের সময় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে নির্ধারিত প্রোটোকল পালন করার জন্য অনুরোধ করেছেন। জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও জানিয়েছিলেন কয়েকজনের ভুলের জন্য চিকিৎসকদের সম্প্রদায়কে সন্দেহের আওতায় আনা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী।
তিনি বলেছেন, প্রথমত, আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে যে, বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করার পর এবং চিকিৎসক হওয়ার পরেও কেন কিছু মানুষ সহিংসতা বা চরমপন্থার আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।পাশাপাশি, কাশ্মিরি চিকিৎসকদের যেন এর আঁচ পোহাতে না হয়, সেই বিষয়েও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তার কথায়, তদন্তকারী সংস্থাগুলোকেও খেয়াল রাখতে হবে, এই তল্লাশি অভিযান সারা দেশে বৈধভাবে কাজ করা কাশ্মীরি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে জনগণের ঘৃণার সৃষ্টি না করে। বিবিসি বাংলা।



