জাতীয়

গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদি সংকটাপন্ন

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে গুলি করে। এসময় তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাদীর সিটি স্ক্যান ও অস্ত্রোপচার হয়। হাদির মাথায় বুলেটের আঘাত আছে। বুকে ও পায়েও আঘাত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পায়ের আঘাতটা রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে হতে পারে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তার চিকিৎসার জন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। একইসঙ্গে তার চিকিৎসার জন্য রক্ত সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
চিকিৎসকের বরাতে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, ওসমান হাদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
জানা গেছে, ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে রিকশাটি পৌঁছলে হঠাৎ একটি মোটরসাইকেল থেকে তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কে বা কারা গুলি ছুড়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।
শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির করার সঙ্গে তার পেছনের রিকশায় ছিলেন মো. রাফি। তিনি বলেন, জুমার নামাজ শেষে রিকশায় আমরা হাইকোর্টের দিকে আসছিলাম। বিজয়নগরে আসতেই একটা মোটরসাইকেলে করে দুজন এসে হাদি ভাইয়ের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। আমি ভাইয়ের পেছনের রিকশায় ছিলাম।
এদিকে হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সেখানে তোপের মুখে পড়েন তিনি। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এলে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান শুরু করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ও হাদির সমর্থকরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মির্জা আব্বাসকে নিরাপত্তা দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেন। এ সময়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা আরও নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
হাদির একজন সহযোদ্ধা বলেন, জুমার নামাজের পর মসজিদে তাদের লিফলেট বিলি কর্মসূচি ছিল। কথা ছিল লিফলেট বিলি শেষে সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়ে দুপুরের খাবার খাবেন, আলোচনা করবেন। এর মধ্যেই হাদির ওপর হামলার খবর আসে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। ‘সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ ওসমান হাদি ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বলেন, এই রায় পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে। গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরনো ধারায়’ রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। একই অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেছিলেন হাদি। এর বাইরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা এবং দৃশ্যত পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন।
গুলিবিদ্ধ ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে ভিড় করছেন সমর্থক, সাধারণ মানুষ ও উৎসুক জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে ওসমান হাদির সমর্থক ও সাধারণ উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। জরুরি বিভাগের মূল ফটকে অবস্থান করে অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণে কাজ করে সেনাবাহিনী সদস্যরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হাদির মাথায় বুলেটের আঘাত আছে। বুকে ও পায়েও আঘাত আছে। ধারণা করা হচ্ছে, পায়ের আঘাতটা রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে হতে পারে। আমরা ঢাকা মেডিকেলে একটা প্রাথমিক সার্জারি (অস্ত্রোপচার) করেছি। এখন তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, পরিবারের সম্মতিতেই তাকে এভারকেয়ারে নেওয়া হয়েছে। পরিবার প্রথমদিকে সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এভারকেয়ারে নেওয়ার কথা বলেছে। আমরা তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে সেখানে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে।
গত নভেম্বর মাসে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক গুলিবিদ্ধ শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি পাওয়ার কথা ফেসবুকে জানান তিনি। ওসমান হাদি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে কোমায় আছেন। তাকে সিপিআর দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।
এদিকে ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদীর উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান চাকসু নেতারা। ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘পরিকল্পিত’ অভিযোগ করে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম রনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে রাজপথে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে বসে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছেন; এ ধরনের নীল নকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা রাজপথে তার জবাব দেবে। আওয়ামীপন্থিদের বলছি—এ ধরনের ঘটনা ঘটালে কেউ শান্তিতে ক্যাম্পাস ছাড়তে পারবে না। ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে সোহরাওয়ার্দীর মোড় ঘুরে আবার জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ শেষে মাগরিবের নামাজের পর জিরো পয়েন্ট মসজিদে ওসমান হাদির সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল হয়।
অপরদিকে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করবে কেন উনি গুলিবিদ্ধ হলেন। এটা কি প্রার্থী হওয়ার কারণে, রাজনৈতিক কারণে না অন্য কোনো কারণে? তবে আমরা এটাই বলতে পারি, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখবো উনাকে কেন গুলি করা হয়েছে। তার আগে পুলিশকে দিয়ে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে।
এদিকে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা অভিযুক্তদের ধরতে র‌্যাব ও পুলিশ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে। র‌্যাব বলছে, বাহিনীর সবগুলো দল এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর পুলিশ বলছে, একই উদ্দেশ্যে তাদের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, গুলির ঘটনা ঘটার পরপরই র‌্যাব-৩, সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ইউনিটসহ সবগুলো টিম গুলি করা দুজনকে আটকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হয়তো শুক্রবার রাতের মধ্যে একটা ভালো খবর জানাতে পারবো।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, তিনটি মোটরসাইকেলে করে দুর্বৃত্তরা আসে। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তিনি এসময় রিকশায় করে যাচ্ছিলেন।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফুটেজ সংগ্রহ করলেই আমরা বুঝতে পারবো কতজন এবং কারা এ ঘটনায় অংশ নিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ডিএমপি কমিশনার জানান, পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাবসহ সবাই কাজ করছে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে।

Related Articles

Back to top button